‘এসেছে শত পুষ্পের দল করছি তাদের বরণ, হাতে হাতে শোভা পাবে তাদের দেয়া মন।’ মাঘের প্রথমার্ধের দিনের বেলা বাড়তে বাড়তে কুয়াশার চাদর ভেদ করে আধো ভেজা সূর্যটাও হেসে দিয়েছিল। সেই হাসির ছোঁয়া লেগেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নতুন স্বপ্নচারীদের উদ্দীপ্ত প্রাণেও। সেই নবীন প্রাণের উদ্দীপনা ছুঁয়ে গেছে ৭৫৩ একর মতিহারের সবুজ চত্বরে। সকাল থেকেই নবীনদের পদ চারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড, জোহা চত্বর, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বর, চারুকলা, টুকিটাকি চত্বর, আমতলা, শেখ রাসেল চত্বর, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বদ্ধভূমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি একাডেমিক ভবন।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপিঠ পদ্মাপাড়ে মতিহারের সবুজ চত্ত্বরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি এরই মধ্যে বরণ করে নিয়েছে ৬৬ টি ব্যাচকে। তার সাথে যোগ হলো আরও একটি নতুন ব্যাচের। কারো হাতে গোলাপ কারো হাতে রজনীগন্ধা, দলবেঁধে ক্যাম্পাসে ছুটে চলা বা আড্ডায় বন্ধুত্ব সৃষ্টির প্রচেষ্টায়। কেউ কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনটিকে স্মৃতিময় করে রাখতে ছবি তুলতে ব্যস্ত।
মঙ্গলবার স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বিভাগের পক্ষ থেকে বরণ করে নেওয়া হয়। প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় শুভেচ্ছা ক্লাস। অধিকাংশ বিভাগেই সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় নবীনবরণ। তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষক, বড় ভাই ও বোনদের ভালবাসায় সিক্ত হন শিক্ষার্থীরা। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্নের কথা প্রকাশ করেন।
এবার আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন মোহাম্মদ শাহ-জালাল। তিনি বলেন, সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে মনে হয়েছিল এখানে ভর্তি হতে পারলে কতই না সৌভাগ্যবান হতাম! এমন আনন্দ লাগছে যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, পরিবার ছেড়ে এসে হঠাৎ নতুন এক পরিবেশে খুব সংশয়ে ছিলাম। তবে বিভাগে যাওয়ার পর স্যারদের কথা আর সিনিয়রদের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারে সেই সংশয় একেবারেই কেটে গেছে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং হয় বলে জানতাম। অনেক ভয়ে ছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে এতটা বন্ধুসুলভ পরিবেশ পাব সেটা আগে কখনও কল্পনা করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনটা খুব এনজয় করেছি। রাবিতে ভর্তি হতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’ নিজের অনুভূতির কথাগুলো এভাবে জানাচ্ছিলেন ফার্সি ভাষা বিভাগে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থী সুবর্ণা আকতার।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষেল শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বলেন, নতুন বন্ধুত্ব ও নতুন ক্যাম্পাস খুব ভালো লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই-বোন, শিক্ষকরা সবাই আন্তরিক। তারা আমাদেরকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক কথা বলেছেন যা আমাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। প্রথম দিকে ভাবতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগ দেয়া হয়, কিন্তু এখন সেই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও র্যাগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক সচেতন। সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।