দীর্ঘ দেড় বছর যাবৎ অবৈধভাবে সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর পদ জোরপূর্বক ধরে রাখার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের বিরুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি ইনস্টিটিউট থেকে ডেপুটেশনে রয়েছেন। আর ইনস্টিটিউটের নীতিমালা অনুযায়ীও বর্তমানে তার এ পদে থাকার সুযোগ নেই। যদিও ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো সত্ত্বেও দেড় বছরেও পদটি ছাড়ছেন না অধ্যাপক সামাদ। উল্টো ঐ পদের বিপরীতে মাসিক হারে সম্মানি গ্রহণ করছেন তিনি।
অধ্যাপক সামাদের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে তিন মাস করে ছয় মাসের সম্মানি গ্রহণের আংশিক হিসাব গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। যেখানে দেখা যায়, ওই ছয় মাসে তিনি সম্মানি হিসেবে পাঁচ লাখ তিপ্পান্ন হাজার একশত বিশ (৫,৫৩,১২০) টাকা ইনস্টিটিউট থেকে নিয়েছেন। এ নিয়ে বেশ অসন্তোষ রয়েছে ইনস্টিটিটের শিক্ষকদের মধ্যে। শিক্ষকরা বলছেন, অধিক সম্মানি পাওয়ার লোভে পদ ছাড়ছেন না উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে ডেপুটেশন বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এমপ্লয়ি সরকার কর্তৃক কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত থাকেন তাহলে সেটিও ডেপুটেশন হিসেবে গণ্য হবে। যেহেতু অধ্যাপক সামাদ সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, সে হিসেবে তিনি ডেপুটেশনে রয়েছেন। আর সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইভনিং মাস্টার্স প্রোগ্রামের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ৯০ দিনের বেশি ছুটিতে থাকলে পদটি শূন্য হিসেবে বিবেচিত হবে। গত বছরের ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) পদে যোগ দেন অধ্যাপক সামাদ। এর মাস খানেক পর ৪ জুন ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া রহমান চিঠি দিয়ে ইভনিং প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর পদটি শূন্য হওয়া প্রসঙ্গে অবহিত করেন।
এরপর ৬ মাস পার হলেও পদটি না ছাড়ায় উপাচার্যের দ্বারস্থ হতে হয় ইনস্টিটিউটকে। গত বছরের ডিসেম্বরে উপাচার্যকে দেয়া চিঠিতে অধ্যাপক ড. তানিয়া রহমান জানান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ গত ২৮ মে ২০১৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) পদে যোগদান করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক কোনো শিক্ষক সরকার কর্তৃক প্রশাসনিক কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তিনি তার সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে একজন নিয়মিত শিক্ষক হিসাবে গণ্য হন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার পার্ট-২ অনুযায়ী উপ-উপাচার্য ডেপুটেড পদে রয়েছেন। আর সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিউটের ইভনিং প্রোগ্রাম নীতিমালা (বোর্ড অব গভর্নরস ও সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত) অনুযায়ী ৯০ দিনের অধিক ছুটিপ্রাপ্ত হয়ে অন্য কোথাও কর্মরত থাকলে কো-অর্ডিনেটর পদে থাকতে পারেন না। যদিও অধ্যাপক সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের বিধি ও ইভনিং প্রোগ্রামের নীতিমালা অবজ্ঞা করে অদ্যবধি কো-অর্ডিনেটর পদ ধরে রেখেছেন ও মাসিক সম্মানি গ্রহণ করছেন। এমতাবস্থায় নীতিমালা লঙ্ঘন ও ব্যাচ শিক্ষকদের বৈধ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চনার কারণে ইনস্টিটিউটে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের অভিযোগ, সম্মানি প্রাপ্তির কারণেই পদ ছাড়ছেন না অধ্যাপক সামাদ। একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডেপুটেশনে থাকার পরও একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে নিয়োজিত থাকা নিয়ম পরিপন্থী। তিনি (ড. মুহম্মদ সামাদ) ইনিস্টিউটেও আসেন না। কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে কি রয়েছে এ বিষয়ে স্পষ্ট জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমি বিষয়টা সম্পর্কে ক্লিয়ার জানি না। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে একটা দরখাস্ত আসলে আমি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)-র কাছে দিয়ে দেই। পরে কী হয়েছে সেটা জানি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি ক্লাস পরীক্ষা নিতে পারেন। আমরাও নেই। কিন্তু অধ্যাদেশে থাকা নিয়ম সম্পর্কে আমি স্পষ্টত নিশ্চিত নই।’ এ বিষয়ের সত্যতা জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) নিয়োগ পাওয়ার পর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে থাকা কোনো অনিয়ম নয়। আমার এ পদে থাকার আর ৪ দিন মেয়াদ আছে। এখন কেন এ প্রশ্ন উঠল আমি বুঝতেছি না!’
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।