বর্জ্য পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কার্বন কালি উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এই পদ্ধতির নাম পাইরোলাইসিস। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পলিথিন থেকে ৭০ থেকে ৭৮ শতাংশ ফার্নেস তেল ও ৫ থেকে ৮ শতাংশ কার্বন কালি পাওয়া যাবে বলে উদ্ভাবন দলের সদস্যরা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ফার্নেস তেল হতে বর্জ্য তেল নিঃসরণ যন্ত্রের সাহায্যে ৬৫ শতাংশ পেট্রোল ও ৩০ শতাংশ পরিমার্জিত ডিজেলও পাওয়া যাবে। এছাড়া পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ার সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় উচ্চতর ক্যালরিমূল্য সম্পন্ন ১০ থেকে ১৮ শতাংশ নন-কনডেন্সেবল গ্যাস তৈরি হয়। প্ল্যান্টটি তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হিল কাফীর নেতৃত্ব একটি দল। কাফী বলেন, তাদের উৎপাদিত জ্বালানি তেলের ক্যালরিফিক মান ফার্নেসের ক্ষেত্রে ৩৮.৫ মেগাজুল/কেজি ও পেট্রোলিয়াম পেট্রোলের ক্ষেত্রে ৪২.০৯ মেগাজুল/কেজি। এটি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) কর্তৃক পরীক্ষিত।
উৎপাদিত এ ফার্নেস তেল শিল্প কলকারখানায় জ্বালানী উপকরণ হিসেবে এবং খনন যন্ত্র, রাস্তা বেলন বা লোডিং মেশিনের মতো নিম্ন গতির ইঞ্জিনগুলোতে পরিমার্জিত ডিজেল ও পেট্রল ব্যবহার করা যাবে বলে জানান আব্দুল্লাহ হিল কাফী। কার্বন কালি সম্পর্কে বলেন, কার্বন কালোটি মৃত্তিকা দিয়ে তৈরি ইট বা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এই কার্বন কালো প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চমূল্যসম্পন্ন এন-২২০ ও এন-৩৩০ কার্বন পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি রঙের মাস্টার ব্যাচ হিসেবে পাইপ, কেবল জ্যাকেট প্রভৃতির মৌলিক উপাদান হিসাবে প্রক্রিয়াজাত করা যাবে।
পুরো প্লান্ট প্রস্তুত ও জ্বালানি উৎপাদন করতে ৮ মাস একটানা কাজ করতে হয়েছে বলে জানান তিনি। তার উদ্ভাবিত এ প্লান্টে খুব বেশী খরচেরও প্রয়োজন নেই। ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট জমির মধ্যেই হয়ে যাবে পুরো প্ল্যান্ট। ১ হাজার লিটার পানিতে চলে প্ল্যান্টটি। তাপ ও চাপের নিয়ন্ত্রণ, চুল্লি পরিচালনা ও উৎপাদন কাজের জন্য দুজন মানুষের প্রয়োজন। ডিস্টিলেশন প্ল্যান্টসহ পাইরোলাইসিস প্ল্যান্ট বানাতে খরচ পড়বে দুই লক্ষ টাকার মতো। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৭ ঘন্টায় ৮০ কেজি হিসেবে বছরে ২৪ টন জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যাবে এ প্ল্যান্ট দিয়ে। যার মধ্যে ফার্নেস তেল ১৮ টন এবং তা থেকে পেট্রোল ১১.৭ টন ও ডিজেল ৩.৮৪ টন, কার্বন কালো ১.৪ টন এবং গ্যাস উৎপাদন হবে ৩.৮৪ টন।
পলিথিন নিয়ে কাজের সম্পর্কে কাফী বলেন, রাজশাহী শহর ‘গ্রীন সিটি’ নামে পরিচিত। রাসিক মেয়র এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এই শহরকে আরো বেশী সুন্দর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু রাজশাহীতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। সেগুলোর কোনো পুনর্ব্যবহার (রিসাইকেল) হচ্ছে না। আমি অনলাইনে দেখে ও বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি পাইরোলাইসিস নামের এক পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে পলিথিন পুনর্ব্যবহার করে জ্বালানি তেল উৎপাদন সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় মাটি, পানি বা বায়ুর কোনও ক্ষতি বা দূষণ হয় না। এরপরই আমি টিম নিয়ে কাজে নেমে পড়ি। কাফীর নেতৃত্বে এই প্ল্যান্ট তৈরিতে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসয়ায়ন বিভাগের মাহমুদুল হাসান, আভিলাষ দাস তমাল, বাবুল চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ল্যাবরেটরি সহকারী নাসির উদ্দিন আহমেদ লিমন ও মাহমুদুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী। ছোট্ট এ প্ল্যান্টটি নিয়ে কাজ শুরু করলেও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার স্বপ্ন মাথায় নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।