সৌদি-ইসরাইল চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের দাবি মিথ্যা: রিয়াদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
সৌদি-ইসরাইল চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের দাবি মিথ্যা: রিয়াদ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে শর্ত হিসেবে রাখেনি, তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। রিয়াদ জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো সম্ভাবনা নেই। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে।  


সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করতে চায় এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে নিয়ে সেখানে পুনর্গঠন করবে। তবে এই বক্তব্যের পরই সৌদি আরব জানায়, ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে তাদের অবস্থান অটল। রিয়াদ স্পষ্ট করেছে, এই শর্ত পূরণ না হলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রশ্নই ওঠে না।  


সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আগেও বলেছেন, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না হলে ইসরাইলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হবে না। যদিও বিবৃতিতে ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, তবে এতে পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে যে, আগের মার্কিন প্রশাসনের মতো বর্তমান প্রশাসনকেও সৌদি এই বার্তা দিয়েছে।  


বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব প্রকাশ্যে কঠোর অবস্থান নিলেও গোপনে কিছুটা নমনীয়তা দেখাতে পারে। অনেকে মনে করেন, রিয়াদ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের একটি মূল কাঠামো চায়, এরপরই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে চিন্তা করতে পারে। তবে সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিন ইস্যু নতুনভাবে গুরুত্ব পাওয়ায়, সৌদি এখন আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছে।  


গাজা সংকটের পর সৌদি আরব বিশ্ব সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি এখন এমন একটি চূড়ান্ত পথ চায় যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হবে। এই অবস্থান বজায় রেখেই রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা আপস করবে না।  


ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টায় সৌদি আরবকে যুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সৌদি আরবের প্রধান শর্ত হওয়ায় এই প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল হয়নি।  


আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় এবং সৌদি আরবকে চাপ প্রয়োগ করে ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তিতে আনতে চাইছে। তবে সৌদি সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যে পরিষ্কার যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না দিলে তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।  


ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের এই কড়া অবস্থান বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে আরব বিশ্বের নেতারা এখন সৌদির সিদ্ধান্তের ওপর দৃষ্টি রাখছেন। সৌদি আরবের অবস্থানের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের জন্য নতুন কৌশল নির্ধারণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।