পারিবারিক কলহের জের ধরে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ময়ুরখীল গ্রামে একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যেখানে পিতাকে হত্যা করেছে তারই ছেলে। খোকন মজুমদার (৪০) নামে ওই যুবক তার বাবাকে রড দিয়ে মারধর করে গুরুতর জখম করে, যার ফলে তার মৃত্যু ঘটে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে, ঘটনার পর আসামী ঘটনাটি রোড এক্সিডেন্ট বলে ভিকটিমের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করলেও, তার বাবার মৃত্যুতে সৃষ্ট রহস্য অবশেষে উদ্ঘাটিত হয়েছে।
২০ জানুয়ারি রাতে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে খোকন মজুমদারের সঙ্গে তার বাবার, ৬৯ বছর বয়সী বিনোদ মজুমদারের, তুমুল ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে, ভিকটিম তার ছেলেকে রড দিয়ে মারধর করলে খোকন ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাবাকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। তার মারাত্মক আঘাতে পিতার শরীরে গুরুতর জখম হয়। নিহতের স্ত্রী, রিনা মজুমদার (৬০), কিছু সময়ের জন্য নাতি-কন্যার কাছে চলে যান, তবে তিনি ফিরে এসে দেখেন তার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন।
এই ঘটনার পর খোকন তার বাবাকে প্রথমে মানিকছড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামের চ.মে.ক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে, চিকিৎসকরা জানতে পারেন যে তার শরীরে কোনো বাইক দুর্ঘটনা ঘটেনি, বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে, ঘটনাটি তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রডটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। হত্যার পর খোকন মজুমদার তার বাবাকে হাসপাতাল নিয়ে গিয়ে রোড এক্সিডেন্টের কথা বলে চিকিৎসা করায়। তবে তার এমন আচরণে পুলিশ সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং তদন্ত শুরু হয়।
এদিকে, নিহতের স্ত্রী রিনা মজুমদার খোকনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ জানুয়ারি হত্যামামলা রেকর্ড করে খোকন মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার মোঃ আরেফিন জুয়েল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোকন হত্যাকাণ্ডের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণে যেহেতু একটি পরিবারের শান্তি বিঘ্নিত হয়েছে, তাই তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য বের করার জন্য পুলিশ কাজ করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খোকনের বিরুদ্ধে এই হত্যার অভিযোগ আসার পর, তার অপরাধী মনোভাবের ব্যাপারে তদন্ত আরও গভীর করা হবে। পাশাপাশি, খোকনের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকার জনগণ শোকাহত হলেও তারা পুলিশের কার্যকর তদন্তের জন্য আশাবাদী। অনেকেই বলছেন, পারিবারিক কলহের কারণে এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যা শুধু এক পরিবারকেই নয়, পুরো সমাজকে হতাশ করেছে।
এছাড়া, নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, খোকনের আচরণে তারা আগে থেকেই কিছুটা অবগত ছিলেন, কিন্তু কখনও ভাবেননি যে তার ছেলে এমন একটি নির্মম কাজ করতে পারে। তারা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন, যেন তাদের প্রিয়জনের হত্যার সঠিক বিচার হয়।
তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এই ধরনের হত্যার ঘটনা যদি প্রতিরোধ করা না যায়, তবে সমাজে আরও বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। তাই তারা স্থানীয় পর্যায়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।