ইসলামী দাওয়াত মানবতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দ্বীনি দায়িত্ব। কোরআন ও হাদিসে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসলমানদের জন্য সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা অবশ্য কর্তব্য। ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করা, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা তার নবী-রাসূলদের মাধ্যমে এই দাওয়াতের দায়িত্ব বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দিয়েছেন, এবং এই দায়িত্ব আজও মুসলমানদের ওপর বর্তায়।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হওয়া উচিত, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকামী।" (সূরা ইমরান-১০৪)। অর্থাৎ, ইসলামী দাওয়াত শুধু একজন ব্যক্তির কাজ নয়, এটি সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছানো উচিত। এই দায়িত্ব মুসলমানদের ওপর পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় পর্যায়ে পালন করতে হবে।
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী এবং সমাজের অন্য সদস্যদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করা যেমন জরুরি, তেমনি মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ইসলামি শিক্ষা ও দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তি তার অবস্থান ও ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এই দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করতে পারে। যেমন—একজন মাদ্রাসার শিক্ষক তার ছাত্রদের, একজন ইমাম তার মুসল্লিদের, একজন ব্যবসায়ী তার কর্মচারীদের দ্বীনি শিক্ষার আহ্বান জানাতে পারে।
দাওয়াতি কাজ সীমিত স্থানে না রেখে, প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সর্বত্র ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছানো। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ইসলাম প্রচারের সুযোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলমানদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ, যাতে তারা তাদের ধর্মের প্রকৃত বার্তা বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দিতে পারে। অতীতে মুসলিম সমাজে প্রচার কার্যক্রম সীমিত ছিল, তবে এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলামি দাওয়াত পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
এছাড়া, দাওয়াতি কাজের সময় নম্রতা, সহিষ্ণুতা এবং ভালো আচরণের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআন ও হাদিসে এসেছে, "তোমরা মানুষের সাথে নম্র ব্যবহার করো, রূঢ় আচরণ করোনা, সুসংবাদ দাও, ভয় দেখানোর প্রয়োজন নেই।" (বুখারি ও মুসলিম)। ইসলামী দাওয়াত শুধু বক্তৃতা বা লেখনির মাধ্যমে নয়, বরং মানবিক গুণাবলী যেমন- সদাচার, দয়া, এবং ভালো ব্যবহার দ্বারা হতে হবে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইসলামী দাওয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেহেতু এটি সবার উপকারে আসে, তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই কাজটি মনোযোগ সহকারে ও আন্তরিকতার সাথে পালন করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দাওয়াতের মাধ্যমে তার পথে পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।