গত ৬ মাসে ৩ বার চেষ্টা করেও ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সুরমাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন হয়নি। বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষকের স্বামীকে কমিটিতে নিয়ে আসতেই এমন সময়ক্ষেপন ও তালবাহানা করছেন বলে প্রধান শিক্ষক ও কিছু প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন। অন্যদিকে রিটানিং অফিসারের দাবি নির্বাচন স্থগিত ও সময়ক্ষেপন হচ্ছে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুরমাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের জুন মাসে। নতুন কমিটি গঠন করতে ১৪ জুন সভা ডাকেন প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান। সেখানে চারজন অভিভাবক সদস্যকে সিলেকশনের মাধ্যমে নির্বাচিত করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনুমতির জন্য পাঠালে বিধি মোতাবেক হয়নি বলে সেটি বাতিল করা হয়। এরপরেও কমিটি গঠন করার চেষ্টা করেও বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন।
গত ১৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের তফশীল ঘোষণা করেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও কমিটি গঠনের রিটানিং অফিসার শাহিনুর ইসলাম। সেই তফশীলেও হয়নি কমিটি। সবশেষ ২২ ডিসেম্বর পুনরায় কমিটি গঠন করতে তফশীল ঘোষণা করেন তিনি। সেই তফশীল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র গ্রহণ, যাচাই বাছাই এবং প্রত্যাহার শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার এবং ভোটগ্রহণের তারিখ আগামী ২৯ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। মনোনয়ন ক্রয়, যাচাই-বাছাই ও প্রার্থীতা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মঙ্গলবার(২৭ ডিসেম্বর) অনির্দিষ্ট কালের কমিটি গঠনের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন।
কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত করায় ক্ষুদ্ধ প্রার্থী ও ভোটারগণ। তাদের অভিযোগ ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মেরিনা আক্তারের স্বামী মঈন কে অভিভাবক সদস্য হিসেবে কমিটিতে এনে সভাপতি করতেই এমন তালবাহানা এবং সময় ক্ষেপন করছেন। এতে সহযোগিতা করছেন রিটানিং অফিসার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহিনুর ইসলাম।
প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান বলেন, আমি আগামী ৩১ তারিখে অবসরে যাবো। চেষ্টা করেছি মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি পুনরায় গঠন করে দেওয়ার। কিন্তু বার বার বাধার কারণে সম্ভব হয়নি। সহকারী শিক্ষক মেরিনা আক্তার চান আমি অবসরে যাওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাবেন। তার অধীনে নির্বাচনটা হউক।
একই অভিযোগ করেছেন সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন ও অন্যান্য প্রার্থীরা। তাদের দাবী তফশীল অনুযায়ী আগামী ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার। প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমানের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারা।
অভিযোগ অস্বীকার করছেন সুরমাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মেরিনা আক্তার। তিনি বলেন, এসবের কিছুই জানিনা। তার স্বামী প্রার্থী হয়েছেন এমন কথা স্বীকার করলেও বেশি কথা বলতে রাজি নন তিনি।
অন্যদিকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের উপর দায় দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহিনুর আলম বলেন, কাউকে বিজয়ী করতে কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করার অভিযোগটি মিথ্যা। আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশে স্থগিত করেছি। এরবাইরে সব শিক্ষা কর্মকর্তা বলতে পারবেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অতুল প্রসাদ সিংহ বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি পরীক্ষার কারণে কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এরপরেই কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। যাতে কারো কোন অভিযোগ না থাকে।
সুরমাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে ৪ জন অভিভাবক সদস্যপদের বিপরীতে ১৫ জন মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে ২ জন প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিদ্যালয়টি মোট ভোটারের সংখ্যা ১৩৬ জন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।