অদম্য মোবারক কব্জি দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ২২শে নভেম্বর ২০২১ ১০:৫৫ অপরাহ্ন
অদম্য মোবারক কব্জি দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ

দুটি হাত কব্জি পর্যন্ত কাটা। জন্ম থেকে এ অবস্থা। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে কোনো কিছু ধরার উপায় নেই। তারপরও থেমে থাকেননি। তার এই অক্ষমতাকে জয় করে দুই হাতের কব্জি দিয়ে কলম ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন শারিরীক প্রতিবন্দ্বী মোবারক আলী।


শুধু কি তাই, মেধাবী মোবারক দুই হাতের কব্জি দিয়ে লিখে পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। মোবারক আলী কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।


সোমবার (২২ নভেম্বর) সকালে ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে ৯ নম্বর কক্ষে উচ্চতর গণিত বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন মোবারক। তার রোল নম্বর ২১৫৭৭৩। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়তি সময় লাগেনি তার। অন্য পরীক্ষার্থীর মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর লিখে শেষ করে কক্ষ ত্যাগ করেছেন।


কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের দিনমজুর এনামুল হক ও মরিয়ম বেগম দম্পতির দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের মধ্যে সবার বড় মোবারক। জন্ম থেকে দুই হাত নেই। কব্জি পর্যন্ত কাটা।


মা মরিয়ম বেগম জানান, মোবারক যত বড় হচ্ছিল-দুঃশ্চিন্তা তত বাড়ছিল। কিন্তু হাল ছাড়েননি-ভেঙে পড়েননি। শারীরিক প্রতিবন্দ্বী হলেও মোবারককে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। দুই হাতের কব্জি এক করে কলম ধরে খাতায় লেখার কৌশল শিখিয়েছেন তিনি।


তিনি আরও জানান, মেধাবী মোবারক এ ভাবে লিখে পিএসসি এবং জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেযে উত্তীর্ণ হয়েছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করবে এই প্রত্যাশা তার।


এদিকে মোবারক আলী জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্দ্বী হওয়ায় অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে বাবা-মাসহ শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারেন এই দোয়া চাইলেন সবার কাছে তিনি।


কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, মোবারক খুবই মেধাবী। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও পারদর্শী। আগের পরীক্ষাগুলোর মতো এসএসসি পরীক্ষাতে মোবারক ভালো ফলাফল করবে-এমন প্রত্যাশা করছেন তিনি।


এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া বলেন, মোবারক অন্যান্য পরীক্ষার্থীর মতো প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।