চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনেই দেশে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৯৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের একটি দৃষ্টান্ত। প্রতিদিন গড়ে আসছে প্রায় ১১.৩৪ কোটি ডলার বা ১৩৮৪ কোটি টাকা, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসেও রেকর্ড ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর প্রতি প্রবাসীদের আস্থার প্রতিফলন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা কমে যাওয়া এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের প্রতিযোগিতামূলক দাম পাওয়ার ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন, যা মার্চ মাসের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহের অন্যতম কারণ।
বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৪৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫৫ কোটি ডলার বেশি। এই ধারা বজায় থাকলে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স নতুন রেকর্ড গড়তে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের কড়া নজরদারি এবং অর্থপাচার রোধের নীতির কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বৃদ্ধি ও সহজ লেনদেন ব্যবস্থার ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড গড়ে ২৬৪ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবাহ ইতিবাচক থাকায় সামগ্রিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে করোনা মহামারির সময় রেকর্ড ২৫৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তা ছাড়িয়ে গেছে। এবছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে, যা ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সঠিক নীতি গ্রহণ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে আসন্ন রমজান ও ঈদ কেন্দ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কিছুদিন উচ্চমাত্রায় থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।