পায়রায় বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ২৪শে অক্টোবর ২০২১ ০৪:২৮ অপরাহ্ন
পায়রায় বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র

দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর স্বপ্নের অবসান হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উন্মুক্ত করে দেয়া হলো দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পায়রা সেতু। ফলে গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা আর পর্যটন কেন্দ্র সাগর কণ্যা কুয়াকাটা যাতায়াতে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হলো। আর পায়রা সেতুতে বরিশাল বিভাগের চিত্র পাল্টে যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, সেতুটিতে যান চলাচলের মধ্য দিয়ে এখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ব্যবসার প্রসার, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।


স্থানীয়দের মতে আনুমানিক ৪০ বছর পূর্বে পটুয়াখালীর পায়রা নদী পারাপারের জন্য চালু করা হয় ফেরী। এতে দখিনের অন্যান্য জেলার সাথে যোগাযোগের পথ সুগম হয়। কিন্তু দিন যতো এগুতে থাকে ফেরিঘাটটি ততোই সাধারণ মানুষ, পরিবহণ চালকদের কাছে দুর্ভোগের কারন হয়ে দাড়ায়। সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই এর দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠতো। আর তখনই মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ। দ্বিতীয় বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৩ সালের মার্চে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। এরপর নানান জটিলতা কাটিয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রবিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে সেতুটির উদ্বোধন  করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


তথ্যানুযায়ী এটাই বরিশাল বিভাগের প্রথম বেশি (১৯.৭৬ মিটার) প্রস্থের চারলেনের সেতু। আর গোটা দেশের মধ্যে এই সেতুতেই প্রথমবারের মতো ‘ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম’ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন দুর্যোগ বা ওভারলোডেড গাড়ি চলাচলের ফলে ব্রিজের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, তার (ক্ষতির) পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। পায়রাসেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হালিম জানান, এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে করা ১ হাজার ৪শ ৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি বাংলাদেশে দ্বিতীয়। অপরদিকে চট্টগ্রামের কর্নফুলি সেতুর মতো এখানেও ২শ মিটারের লং লেন্থ স্প্যান রয়েছে। এই সেতুর কিছু বিশেষত্বর মধ্যে একটি হলো সব থেকে ‘ডিপেস্ট ফাউন্ডেশন’। ১শ ৩০ মিটার পাইল বিশিষ্ট সেতু এটি, যা পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রেও করা হয়েছে। তবে পদ্মাসেতুর আগে এটা হয়েছে।


বিশেষজ্ঞদের মতে পায়রা সেতুতে বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। সেতুটিতে যান চলাচলের মধ্য দিয়ে এখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ব্যবসার প্রসার, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের মতে এ সেতু চালুর মধ্যদিয়ে পায়রা বন্দর, পর্যটন নগরী কুয়াকাটা, নির্মাণাধীন পটুয়াখালী ইপিজেডসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন মান পাল্টে যাবে। আগামী দিনে পটুয়াখালী দেশের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে আর্বিভূত বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, দক্ষিণ বাংলার মানুষের আকাঙ্খা ও স্বপ্নের সেতু পায়রাসেতু। যা অত্যন্ত নান্দনিক নকশায় তৈরি করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এটি নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি সাধিত হয়েছে। এ সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।


পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন হয়। বরিশাল থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় যেতে আগে পাঁচ পাঁচটি ফেরি ছিলো। কিন্তু এখন আর তার একটিরও প্রয়োজন হবে না। নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থায় সল্প সময়ে নিরাপদে পৌঁছানো যাবে সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার এ উন্নয়নে বরিশাল-পটুয়াখালীসহ দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে।