শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি ও অপরাধে জড়ানো: জামিন বাতিলের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:২২ অপরাহ্ন
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি ও অপরাধে জড়ানো: জামিন বাতিলের উদ্যোগ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় অন্তত ছয়জন আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পান। মুক্তির পর তারা চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের মতো অপরাধে জড়িত হচ্ছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, এসব সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করা হবে।  


ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী মঙ্গলবার ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পরও সন্ত্রাসীদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কারামুক্তির পর তারা পুরনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ডিএমপি এসব সন্ত্রাসীদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে তৎপর রয়েছে।  


অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা নতুন করে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে জড়াচ্ছে। তাদের অপকর্মের প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং রেকর্ডের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। সম্প্রতি 'কিলার আব্বাস', পিচ্চি হেলাল, সুইডেন আসলাম, ফ্রিডম রাসুসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এসব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।  


গত ১৫ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন পরদিন থেকেই আধিপত্য বিস্তারে সংঘাতে লিপ্ত হন। একই সময়ে জামিনে মুক্তি পাওয়া পিচ্চি হেলাল ও অন্যান্যরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই সন্ত্রাসীরা নিজেদের আগের মতোই সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত করছেন।  


ডিএমপি কমিশনার বলেন, খুনের মতো ঘটনাগুলোকে ছিনতাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, অপরাধের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করা জরুরি।  


জানা গেছে, মুক্তিপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে গিয়ে আবারও সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এদের কেউ কেউ পত্রপত্রিকায় খবরের শিরোনাম হচ্ছে। তবে ডিএমপি স্পষ্ট করেছে, তারা কাউকে ছাড় দেবে না এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে।  


নেতৃত্বের অভাব ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরা সংশোধন না হয়ে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিএমপি এই প্রবণতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।  


সরকারের পতনের পর মুক্তিপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পুনরায় অপরাধে জড়ানো পরিস্থিতি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। ডিএমপি জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।