বাংলাদেশে এইডস বা এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা গত এক বছরে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে নতুন করে ১ হাজার ৪৩৮ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৭৭ শতাংশ, নারীর ২২ শতাংশ, এবং হিজড়ার ১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসটিডি বা এইডস শাখার তথ্যমতে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বিবাহিত, ৪০ শতাংশ অবিবাহিত এবং ৫ শতাংশ বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, এবং ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী সহ দেশের আটটি বিভাগেই নতুন শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে, যেখানে ৩২৬ জন নতুন এইডস আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, “আমাদের পরীক্ষা করার সক্ষমতা বেড়েছে, তাই শনাক্তও বেশি হয়েছে। তবে এটি অবশ্যই সংক্রমণের দ্রুততার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। চিকিৎসার আওতায় আনার ফলে রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক বছরে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বিশেষত পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, হিজড়াসহ সামাজিকভাবে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ বেশি। তবে বর্তমানে তাদের মধ্যে সংক্রমণ কমে আসছে, যা স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির পরিচায়ক। পাশাপাশি, এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য এবং চিকিৎসার প্রতি ভীতি, কুসংস্কারও সংক্রমণের বিস্তার বাড়াতে পারে।
এছাড়া, রোহিঙ্গা শিবিরে এইডসের চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীও অনেক বেড়েছে। প্রায় ১ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এইডসের চিকিৎসা নিচ্ছেন কক্সবাজারের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী এবং হিজড়াদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার বেশি। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য এবং চিকিৎসা সেবা না পাওয়া তাদের মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
তাদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সমাজের সকল স্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন এবং রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা উচিত, যাতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমানো সম্ভব হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।