মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ায় এসেছিলেন সার্বজনীন আদর্শ ও চরিত্রগত গুণাবলির এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে। তিনি যে আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তা শুধু তাঁর অনুসারীদের জন্য নয়, বরং গোটা মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য ও কল্যাণকর। ইসলামের বিধান ও মহানবীর জীবনাদর্শ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁর চরিত্র ছিল প্রকৃতির, সময়ের এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ-তার জন্য যে আল্লাহ ও আখিরাতকে কামনা করে এবং আল্লাহকে অনেক স্মরণ করে।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং-২১)। মহানবী (সা.)-এর চরিত্রের গুণাবলির মধ্যে রয়েছে সততা, সহানুভূতি, দানশীলতা ও উদারতা। তাঁর জীবন ছিল এক ধরনের জীবন্ত কুরআন, যার মাধ্যমে তিনি প্রতিটি ব্যক্তির জন্য আদর্শ স্থাপন করেছেন।
মহানবী (সা.)-এর চরিত্র ছিল প্রকৃতপক্ষে সর্বোত্তম। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত সদাচারী, দয়ালু, ও সহানুভূতিশীল। তাঁর সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা এতটাই প্রচলিত ছিল যে, তাঁকে 'আল আমীন' নামে অভিহিত করা হতো। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলির মধ্যে রয়েছে সত্যবাদিতা, ধৈর্য, ত্যাগ, দয়া এবং মমত্ববোধ।
প্রাণবন্ত জীবনের প্রতিটি দিক থেকে মহানবী (সা.) ছিলেন এক অনন্য আদর্শ। ইসলাম ধর্মের সকল আদর্শের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যেমন আদম (আ.) এর তাপ ও ক্রন্দন, নূহ (আ.) এর দাওয়াতী চরিত্র ও কষ্ট সহিষ্ণুতা, মুসা (আ.)-এর সংগ্রামী জীবন ও পৌরুষ ইত্যাদি গুণাবলি মহানবী (সা.)-এর মধ্যে সন্নিবেশিত ছিল। ইসলামের প্রতি আস্থা রাখার জন্য মহানবী (সা.)-এর চরিত্র উদাহরণ হিসেবে দৃষ্টিগোচর।
মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন, “আমি তো আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের জন্য রহমত সরূপ।” (সূরাহ আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)। এখানে মহানবী (সা.)-এর চরিত্রের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শে নিম্নলিখিত গুণাবলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
১. **তাকওয়া ও আল্লাহভীতি**: মহানবী (সা.) সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতেন এবং গোপন ও প্রকাশ্যে তাঁর আদেশ অনুসরণ করতেন। তাঁর জীবন ছিল আল্লাহভীতি ও তাকওয়া দ্বারা পূর্ণ।
২. **দানশীলতা ও উদারতা**: মহানবী (সা.) সব সময় দানশীল ও উদার ছিলেন। তাঁর কাছে কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনো 'না' বলতেন না। তাঁর এ গুণাবলি তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে অতি প্রিয় করে তুলেছিল।
৩. **সহানুভূতি ও মমত্ববোধ**: মহানবী (সা.) শিশুদের কান্না শুনলে নামায সংক্ষিপ্ত করে দিতেন, যাতে মায়েরা কষ্ট না পায়। তাঁর এ আচরণ তার মানবিক গুণাবলির প্রমাণ।
৪. **সততা ও ন্যায়বিচার**: মহানবী (সা.) তাঁর জীবনে সর্বদা সততা ও ন্যায়বিচার বজায় রেখেছেন, যা তাঁর অনুসারীদের জন্য এক অনন্য শিক্ষা।
মহানবী (সা.)-এর চরিত্র ও আদর্শ আজও আমাদের জীবনে একটি প্রেরণা হিসেবে বিদ্যমান। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় কিভাবে একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ ও সদাচারী হতে হয়। কুরআন ও সুন্নাহ’র মাধ্যমে তাঁর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে, আমরা আমাদের জীবনে সত্যিকারের কল্যাণ ও শান্তি অর্জন করতে পারি।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।