কেন দেরিতে নির্বাচন চায় জামায়াত? অভ্যন্তরীণ কৌশল প্রকাশিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শুক্রবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩১ অপরাহ্ন
কেন দেরিতে নির্বাচন চায় জামায়াত? অভ্যন্তরীণ কৌশল প্রকাশিত

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল হিসেবে পরিচিত জামায়াত ইসলামি দলটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর জামায়াত দেশজুড়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম বাড়িয়ে তুলেছে এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।


গত এক মাসে জামায়াত নেতারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। এই কর্মসূচিগুলোতে তারা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তারা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের পাশে থেকে তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে দলটি। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জামায়াত নিজেকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে।


তাছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জামায়াতের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বন্যার্তদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে দলটি জনগণের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করছে, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


জামায়াতের এই কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতের নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন। ছাত্র আন্দোলন এবং বন্যায় সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে দলটি জনগণের মাঝে নতুন করে তাদের গ্রহণযোগ্যতা পুনঃস্থাপন করতে চাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রচারণা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের শক্ত ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।


পাঁচ আগস্টের পর থেকে জামায়াতের এই নতুন ভূমিকা তাদের রাজনৈতিক কৌশলের একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটির নেতারা বিশ্বাস করেন যে, ছাত্র আন্দোলন ও জনতার অভ্যুত্থানই তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে, যা তারা রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তাদের নতুন নেতৃত্বের প্রভাবে দলটি নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে সক্ষম হচ্ছে।


তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, জামায়াতের এই পদক্ষেপগুলো দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তারা মনে করেন, জামায়াতের এই রাজনৈতিক ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা তাদের পুরনো রাজনৈতিক কৌশলেরই একটি অংশ, যা তারা রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য ব্যবহার করছে। সামনের দিনগুলোতে এই কৌশল কতটা সফল হবে, তা দেখার জন্য দেশের রাজনৈতিক মহল উৎসুক।


অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জামায়াত ইসলামি দলটি বাংলাদেশে তাদের নতুন রাজনীতির পথচলা শুরু করেছে। তারা নিজেদেরকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা আগামী নির্বাচনে তাদের জন্য বড় পরিবর্তন আনতে পারে।