দেবীদ্বারে ৩ শিশুর সাথে অনৈতিক কাজের অভিযোগে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে ২ দফা সামাজিক ও হুজুরের সালিসে ১০১ দোররা, গলায় জুতার মালা, মাথা ন্যাড়াসহ ১০ হাজার টাকার জরিমানা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটে কুমিল্লা দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের আইছা গাজীর বাড়িতে। ঘটনার পর থেকে ওই বৃদ্ধ বাকরুদ্ধ এবং অসুস্থ্য হয়ে নিজ বাড়িতে শয্যাসায়ী।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার দুপুরে, ওই বাড়ির ৭ বছর বয়সী নাতনী সম্পর্কীয় এক শিশুকে ডেকে এনে শ্লিলতা হানির চেষ্টার অভিযোগে আব্দুল কাদের(৬৫)’র বৃদ্ধার বিরুদ্ধে ওই শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়। এর আগেও এ বৃদ্ধ একই বাড়ির ভাইস্তি সম্পর্কীয় দুই শিশুর সাথে একই আচরন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে, গত শনিবার সামাজিক সালিস ডাকা হয়। সালিসে একই বাড়ির চট্রগ্রামে কর্মরত পুলিশ সদস্য মোঃ ইউনুছ মিয়া, খুলনায় সেটেলম্যান্ট অফিসে কর্মরত আব্দুল হাকিম, কৃষক সুলতান আহমেদ, আলমগীর হোসেন’র উপস্থিতিতে ওই বৃদ্ধার মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে কান ধরে উঠবস করানো হয়। একই সাথে কাফফারা হিসেবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তীতে তাকে হুজুরের মাধ্যমে শুদ্ধি করার নামে গত সোমবার আবারো সালিস ডাকা হয়। সালিসে বারেরা মোল্লা বাড়ির ইমাম মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম এবং বারেরা দাখিল মহিলা মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মোঃ ইব্রাহীম খলিলসহ দুই হুজুর ডাকা হয়।
বৈঠকে মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম’র ফতোয়ায় বৃদ্ধাকে ১০১ দোররা, জুতার মালা গলায় দিয়ে উপস্থিত সকলের নিকট কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার ফতোয়া জারী করেন। একই সাথে ১০১ দোররা মারার দায়িত্বটা মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম নিজ হাতে কার্যকর করেন।
সালিসদার আলমগীর হোসেন বলেন, ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী দোররার ফতোয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রীয় আইনে নিষিদ্ধ এটা আমার জানা ছিলনা। দোররা মারার ফতোয়া কার্যকর করার সময় মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম ১০টি বেত একত্র করে ১০ বার বেত্রাঘাত এবং ১টি বেত দিয়ে একবার বেত্রাঘাতে ওই রায় কার্যকর করেন। তাছাড়া অভিযুক্তের স্ত্রী মিনুয়ারা বেগমকে দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার রায় কার্যকর করা হয়। ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় হলেও তা এখনো কার্যকর করা হয়নি।
অপরদিকে এলাকার বিশিষ্ট সালিসদার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনিরুল হক মোল্লা জানান, বিষয়টা তিনি পরে শুনেছেন, তাকে জানালে তিনি রাষ্টের আইন ও মানবতা বিরোধী ফতোয়া জারী ও বাস্তবায়নের সুযোগ পেতনা। অপরাধ প্রমান হলে তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে পারত।
অভিযুক্ত আব্দুল কাদের ৫ ছেলে ও ৩ কণ্যা সন্তানের জনক। ২ ছেলে কোরানে হাফেজ, এক ছেলে প্রবাসী, একছেলে প্রতিবন্ধি, একছেলে বাড়িতে থেকে কৃষি কাজ করেন, ৩ কণ্যারই বিয়ে হয়ে গেছে। তার উপর এমন অমানবিক রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী বিচার আমাদের স্তম্ভিত করেছে।
এ ব্যাপারে বারেরা দাখিল মহিলা মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মোঃ ইব্রাহীম খলিল জানান, আমাকে তারা ডেকে নিয়ে গেছেন, বিষয়টি জানার পর মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম হুজুরকে বলেছি, ফতোয়া এখন রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী, দোররা মারার রায় কার্যকর করা যাবেনা, আর যদি ইসলামি শরীয়ামতে বিচার করতে হয়, তাহলে মুফতির নির্দেশনা লাগবে।
বারেরা মোল্লা বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, আমি ইসলামিয়া শরীয়া মতে সকলের উপস্থিতিতে দোররা কার্যকর করেছি এবং তওবা পড়িয়েছি।
অভিযুক্ত আব্দুল কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন প্রশ্নের জবাব দেননি তবে মাথা নেড়ে নেড়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।