চাঁদপুর শহরের বিপনীবাগ বাজার এলাকায় থেকে নারায়ন ঘোষ (৬০) নামের এক দধি ব্যবসায়ীর বস্তাবন্দী গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বিপনীবাগ বাজারের মেসার্স শরীফ স্টীল ওয়ার্কসপের কারখানার পাশ থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশের একটি সেলুন থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ ও পিবিআই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়।
নিহত নারায়ন ঘোষ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের নতুনবাজার ঘোষপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত যোগল কৃষ্ণ ঘোষের ছেলে। দাম্পত্য জীবনে তিনি ২ ছেলে ও ১ মেয়ের সস্তানের জনক। তিনি পাইকারিতে দধি মিষ্টি বিভিন্ন দোকানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্রি করতেন। সন্ধ্যার পর যেসব দোকানে এসব মিষ্টি ও দই বিক্রি করতেন সেইসব দোকান থেকে টাকা কালেকশন করে বিপনীবাগের মার্কেটের টিপটপ হেয়ারকাটিং সেলুনের সামনে এসে গল্প করতেন। নিহতের ছোট ছেলে রাজু ঘোষ ও ফুফাতো ভাই চন্দ্রনাথ ঘোষ চন্দ্র জানান, নারায়ন ঘোষ বহুকাল ধরে পাইকারিতে দধি, মিষ্টি বিক্রি করতেন।
বুধবার সন্ধ্যায় তিনি টাকা কালেকশন করতে বাজারে যান। এরপর আর বাড়ি ফিরেননি। নারায়ন ঘোষ রাতে বাসায় না ফেরায় আমরা পুরো শহরে হন্ন হয়ে খুজেছি। সকালে তার বস্তাবন্দী লাশের খবর পাই। ঘটনার রাতে তার সাথে বিপনীবাগ বাজার থেকে কালেকশন করা টাকা এবং হাতে একটি স্বর্ণের আংটি ছিলো। বুধবার রাতে তিনি কৃষ্ণ কর্মকারের সেলুনে সেভ করেন যান।
তারা আরো জানান কৃষ্ণ কর্মকার এই সেলুনটি ভাড়া নেওয়ার সময় নারায়ন ঘোষের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা সুদের মাধ্যমে নিয়েছিল। ওই টাকা পরিশোধ না করায় গত ২ দিন আগেও তাদের মধ্যে ওই টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এরই সূত্র ধরে নারায়ন ঘোষকে হত্যা করা হয়েছে বলে নারায়ন ঘোষের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
বিপনীবাগ বাজারের নৈশ প্রহরী মো. ইসমাইল বকাউল জানান, রাত অনুমান ২টায় কৃষ্ণ কর্মকারের সেরুনের কর্মচারি রাজু শীল দোকান খুলে একটি বস্তা নিয়ে দোকানে প্রবেশ করে। আমি দূর থেকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, সামনে পূজা তাই দোকান পরিস্কার করছে। কিছুক্ষণ পর সে বস্তাটি টেনে হিঁচড়া মার্কেটের পেছনে পাবলিক টয়লেটের কাছে নিয়ে যায়। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, দোকানের ময়লা-আবর্জনা পাবলিক টয়লেটের কাছে ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে। এরপর ভোর ৪টায় রাজু শীল সেলুন বন্ধ করে বেরিয়ে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় জানান, আমরা সকালে বস্তাবন্দি লাশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ হত্যার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছি। প্রত্যক্ষদর্শী নৈশ প্রহরী এবং পরিবারের বক্তব্য নিয়েছি। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে অভিযুক্তকে আটক করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার সাথে অন্য কোন বিষয় জড়িত আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ঘাতককে আটক করা যায়নি বলে জানান তিনি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন, চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত নারায়ন ঘোষ সুদের ব্যবসা করতেন। তিনি বিপনীভাগ বাজারের অনেক ব্যবসায়ীকে সুদে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ঘটনার পর থেকে কৃষ্ণ কর্মকারের সেলুনের কর্মচারী রাজু শীল পলাতক রয়েছে। নারায়ন ঘোষের হত্যার ঘটনায় টিপটপ সেলুন মালিক কৃষ্ণ কর্মকার ও রাজু শীলের স্ত্রীসহ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় এনেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।