সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা, বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত দিয়ে সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন পাচাঁর করা হচ্ছে কয়লা, পাথর, কাপড়, সুপারী, কাঠ, বাঁশ, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, হেরুইন, বিড়ি ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল। তবে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামালসহ চোরাকারবারীদের বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করছে র্যাব, ডিবি ও থানা-পুলিশ। কিন্তু সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যরা কাউকে গ্রেফতার করতে পারছেনা। শুধু পরিত্যক্ত অবস্থায় নামমাত্র অবৈধ মালামাল আটক করে তারা। একারণে সীমান্ত এলাকায় সোর্স পরিচয়ধারীরা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে মালামাল পাচাঁরের পর সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবিসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম ভাংগিয়ে প্রতিদিন লক্ষলক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গতকাল মঙ্গলবার (১৭ আগষ্ট) রাতে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তে অভিযান চালিয়ে সোর্সদের পাচাঁরকৃত ১লক্ষ ৬৮হাজার পিস ভারতীয় নাসির বিড়িসহ চোরাকারকারী আব্দুস সামাদ (৫০) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে দোয়ারাবাজার উপজেলার বগুলাবাজার ইউনিয়নের আন্দাইরগাঁও গ্রামের মৃত ছায়াদ আলীর ছেলে। অপরদিকে ছাতক উপজেলার মুক্তিরগাঁও গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে চোরাকারবারী ইজাজুল হক (৩০) কে দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংহপুর ইউনিয়নের পূর্বচাইরগাঁও এলাকায় অবস্থিত চেলা নদীর খেয়াঘাটে গ্রেফতার করার পর তার কাছ থেকে সোর্সদের পাচাঁরকৃত ৬ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় ৪ বোতল কিংফিসার মদ, ২৬ হাজার টাকা মূল্যের ১টি ভিভো মোবাইল ও নগদ ২হাজার ৫শত টাকা উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে আজ বুধবার (১৮ আগষ্ট) ভোরে তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও ক্যাম্পের সোর্স ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান, রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, খোকন মিয়া, শহিদুল্লাহ, বাবুল মিয়া, হারুন মিয়া, জসিম মিয়া, মানিক মিয়া, আনোয়ার মিয়া, একদিল মিয়া, কাসেম মিয়াগং ভারত থেকে ৬৫ মেঃটন কয়লা অবৈধ ভাবে পাচাঁর করে ৫টি নৌকা বোঝাই করে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলা সদরের মনতলা নদীর তীরে অবস্থিত কয়লা ব্যবসায়ী আজিজ মিয়া ও সাজু মিয়ার কাছে নিয়ে বিক্রি করে। আর উপরের চাপ সামলানোর জন্য আলোচনা সাপেক্ষে ৫শ কেজি কয়লা আটক করে বিজিবি। কারণ পাচাঁরকৃত ১বস্তা অবৈধ কয়লা থেকে বালিয়াঘাট ক্যাম্প কমান্ডারের নামে ১২০ টাকা, চারাগাঁও ক্যাম্পের এফএস ও কমান্ডারের নামে ১ নৌকা (১২ মেঃটন) কয়লা থেকে ৬ হাজার, সাংবাদিকদের নামে আব্দুর রাজ্জাক ২হাজার টাকা, তোতলা আজাদের নামে ১৫শ টাকা চাঁদা নিচ্ছে সোর্স ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান জিয়া, রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব। চাঁদা দিয়ে ম্যানেজ করে চোরাচাকারবারী খোকন মিয়া, শহিদুল্লাহ ও একদিল মিয়ার সহযোগীতায় দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ চোরাই কয়লার ব্যবসা করছে কমলাকান্দার আজিজ মিয়া ও সাজু মিয়া।
একই সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে সোর্স লেংড়া জামাল প্রায় ৮শ ঘনফুট কাঠ, মদ, গাঁজা ও ইয়াবা ভারত থেকে পাচাঁরের পর অভিযান চালিয়ে ৮ঘনফুট কাঠ আটক করে বিজিবি। পাশর্^বর্তী লাউড়গড় সীমান্তের বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী, শাহআরেফিন মোকাম, সাহিদাবাদ, পুরান লাউড় ও মুকশেদপুর এলাকা দিয়ে সোর্স সিন্ডিকেডের সদস্য আমিনুল মিয়া, জজ মিয়া, নুরু মিয়া, এরশাদ মিয়া, রফিক মিয়া, নাজিম মিয়া, জসিম মিয়াগং ভারত থেকে পৃথক ভাবে কয়লা, পাথর, মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও বিড়ি পাচাঁরের পর বিজিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে ৭০ ঘনফুট পাথরসহ ১২টি ঠেলাগাড়ি ও ১টি বারকি নৌকা আটক করে। এছাড়াও ধর্মপাশা উপজেলার উপজেলার উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের কাইতাকোনা থেকে ১০ ঘনফুট গোল কাঠ, মধ্যনগর উপজেলার বাঁকাতলা থেকে ৫ ঘনফুট কাঠ ও ৩০ পিস বাঁশ, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাপনা এলাকা থেকে ২৪ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ করেছে বিজিবি। কিন্তু কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২জনকে গ্রেফতার করেছে।
এব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর বলেন- ভারত থেকে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামালসহ গ্রেফতারকৃত ২ চোরাকারবারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত চোরাচালানের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান সাংবাদিকদের বলেন- জব্দকৃত অবৈধ মালামাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও শুল্ক কার্যালয়ে জমা করার কার্যক্রম চলছে। সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।