ঠাকুরগাঁও জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের গাড়িচালক মোকসেদুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এক ব্যক্তি, মনিরুজ্জামান, তার বোন আফরোজা আক্তারের উপর মোকসেদুর রহমানের যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করেছেন।
মনিরুজ্জামান দাবি করেন, মোকসেদুর ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার বোন আফরোজাকে বিয়ে করেন এবং তাদের মধ্যে একটি সাংসারিক জটিলতা শুরু হয়। অভিযোগে বলা হয়, বিয়ের পর মোকসেদুর রহমান ব্যবসার জন্য মনিরুজ্জামানের কাছে ৭ লাখ টাকা ধার নেন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় সংযোগ ও নিয়োগ পরীক্ষায় উৎকোচ দিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা আদালতে গাড়িচালকের চাকরি পান। চাকরির পর তিনি বিচারকের প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক অনিয়ম করতে থাকেন, যার মধ্যে স্ত্রীর উপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও গর্ভে আসা সন্তান নষ্ট করার চাপ অন্যতম।
মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন, মোকসেদুর তার স্ত্রীকে ৭ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতে থাকে এবং এই টাকা না দিলে সংসার ভাঙার হুমকি দেয়। যখন তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন, তখন মোকসেদুর তাকে জানায় যে, "আমি বিচারকের ড্রাইভার, অন্য কোথাও বিয়ে করলে ২০-২৫ লাখ টাকা যৌতুক পেতাম"। এর পরিপ্রেক্ষিতে আফরোজাকে মারধরের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এছাড়া, আরো অভিযোগ রয়েছে যে, মোকসেদুর স্ত্রী আফরোজার গর্ভে আসা সন্তানের ভ্রূণ হত্যা করতে চাপ দেন। আফরোজা বাধ্য হয়ে সন্তান নষ্ট করতে বাধ্য হন। অভিযোগ করা হয়, বিষয়টি জানাজানি হলে মোকসেদুরের বাবা নুর মোহাম্মদ দাবি করেন যে, "যৌতুকের বাকি টাকা দিতে হবে, না হলে মেয়ে নিয়ে যান"।
এ ঘটনায়, আফরোজার পরিবার স্থানীয় থানায় অভিযোগ করতে গেলে, মোকসেদুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে সদর থানা পুলিশকে নিষেধ করা হয়। এরপর, বিচারকের চেম্বারে গিয়ে সাবেক বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেন আফরোজার পরিবারের কাছে মুচলেখা আদায় করেন, যাতে কোনো মামলা করা না হয়।
মোকসেদুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, ২০২১ সালের জানুয়ারী ও মার্চ মাসে ব্যাংক থেকে একটি বিশেষ ব্যক্তির নামে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ব্যক্তির নাম খন্দকার আরিফুল ইসলাম, যিনি ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক বিচারক মামুনুর রশিদের ব্যক্তিগত সহকারী।
মোকসেদুরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কারণে তার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ রয়েছে। একাধিক স্থানীয় অভিযোগ করেছে যে, বিচারকের গাড়ি চালানোর ক্ষমতা নিয়ে তিনি রাতারাতি বেশ কিছু সম্পদ গড়েছেন, যার মধ্যে বাড়ি, গাড়ি এবং দোকানপাট রয়েছে।
এ বিষয়ে, মনিরুজ্জামান বলেন, “আমার বোনের উপর যৌতুকের জন্য যে নির্যাতন করা হয়েছে, তার বিচার চাই। মোকসেদুর তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদেরকে শঙ্কায় রাখে।”
মোকসেদুর রহমান অবশ্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।”
তবে, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, মোকসেদুর রহমানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং বর্তমানে আসা সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়, তবে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।