সাধারণ ছুটি থাকবে লকডাউন এলাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ১৩ই জুন ২০২০ ১০:০১ পূর্বাহ্ন
সাধারণ ছুটি থাকবে লকডাউন এলাকায়

অর্থনীতি বাঁচিয়ে অধিক সংক্রমিত ‘রেড জোনগুলোতে’ কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য গোটা দেশ নয়, এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনার বিস্তার বন্ধ করতে সংক্রমণ বিবেচনায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেসব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুক্রবার সরকারের পাঁচজন মন্ত্রী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব অনলাইন বৈঠক করেন। বৈঠকে অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলোতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়। এবং চাকরিজীবীদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে লকডাউন করা এলাকায় সাধারণ ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। লকডাউন ঘোষণার আগ মূহূর্তে ওই এলাকার নাম ঘোষণা করা হবে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সংক্রমণ বেশি থাকায় আরও বিভিন্ন এলাকায় শিগগির লকডাউন হবে। তবে ওই সব এলাকার নাম বেশি আগে ঘোষণা দেওয়া হবে না। আগ মুহুর্তে নাম ঘোষণা করা হবে। কারণ বেশি আগে ঘোষণা করলে ওই এলাকার অনেক মানুষ এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তিরাও অন্যত্র চলে যেতে পারে, যা ঝুঁকি বাড়বে। আর যেহেতু এখন লকডাউন এলাকায় বাজার-সদাইসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে, ফলে আগ মুহুর্তে ঘোষণা করলেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।এছাড়া শক্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে একটি এলাকার কেবল বেশি সংক্রমিত অংশকেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।

বৈঠকে অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, কোনো ওয়ার্ডের যে অংশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বিপদজনক বা রেড মাত্রায় পৌঁছেছে, শুধু সেই এলাকায় লকডাউন করলে কাজের চাপ কম হবে। সারাদেশে যখন এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হবে তখন সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ন্যস্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে জন্য জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এটি কার্যকর করা হবে।

ত্রাণবিতরণসহ বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিগুলোকে সক্রিয় করে লকডাউনের বিধিবিধান বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিলে তা অধিক কার্যকর হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। এছাড়া এসব এলাকায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য 'অ্যাম্বুলেন্স সেল' করে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত রেড জোন জায়গাগুলো লকডাউন থাকবে। রেড জোনগুলোতে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট হবে। এসব এলাকায় স্পেশাল কেয়ার থাকবে, যাতে মুভমেন্ট না থাকে। রেড জোনগুলোতে অফিস বন্ধ থাকবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু পর সারা দেশে ২৬ মার্চ থেকে অফিস আদালত ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে শুরু হয় লকডাউনের বিধিনিষেধ।কয়েক ধাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করার পর ৩১ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছুই ‘সীমিত’ আকারে খুলে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং দূরত্ব রাখার নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়। বিধিনিষেধ শিথিলের পর আবার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে কাজে ফেরা শুরু করলে দেশে সংক্রমণ আর মৃত্যু বাড়তে থাকে।

অন্য অনেক দেশে যেখানে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করার পর লকডাউন তোলা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে মহামারির ওই অবস্থায় যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া লকডাউন তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় কমিটির কয়েকজন সদস্যও প্রশ্ন তোলেন। এরপর ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে অবরুদ্ধ রাখা হয়।সরকারি হিসাবে, দেশে এ পর্যন্ত ৮১ হাজার ৫২৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গেছেন ১ হাজার ৯৫ জন।