কক্সবাজার জেলায় আইওএম'র প্রযুক্তির 'কোভিড ইনফো লাইন' উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
শ.ম.গফুর , উপজেলা প্রতিনিধি উখিয়া- কক্সবাজার
প্রকাশিত: শুক্রবার ৫ই জুন ২০২০ ০৭:১৫ অপরাহ্ন
কক্সবাজার জেলায় আইওএম'র প্রযুক্তির 'কোভিড ইনফো লাইন' উদ্বোধন

কক্সবাজার জেলায় কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চলাচলে বিধিনিষেধের নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রবাহ রক্ষার গুরুত্ব ইতোমধ্যে অনুধাবিত হয়েছে। ভাইরাস সম্পর্কে ব্যাপক গুজব এবং ভুল তথ্যের কারণে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রমাণ-ভিত্তিক যোগাযোগ বজায় রাখা এখন যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।

মহামারীটি বাংলাদেশের কক্সবাজারে জেলায়ও বিশ্বের অন্যতম বড় শরণার্থী শিবিরের ৮৬০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ প্রায় ১.২ মিলিয়ন অরক্ষিত মানুষের জন্য একটি বিরাট ঝুঁকি হিসেবে ধরা হচ্ছে। গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবিরে কোভিড-১৯- এর কারণে প্রথম মৃত্যু হয়েছিল যার মাধ্যমে,ভাইরাস প্রতিরোধে মানবিক সহায়তা কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর অব্যাহত প্রচেষ্টার গুরুত্ব আরো বাড়িয়েছে। চলমান স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি যথাযথ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানবিক সহায়তা কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো এবং উপকারভোগীদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে যার জন্য উদ্ভাবনী সমাধান প্রয়োজন।

প্রয়োজনীয় তথ্য প্রচার এবং এই সংকটে মানুষের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয়দের সাথে নিবিড় সহযোগীতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম- জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা) এপ্রিলের শেষের দিকে ইন্টারএক্টিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) নামক একটি গণযোগাযোগ পদ্ধতি চালু করে।

‘কোভিড ইনফো লাইন’ নামের এই তথ্য প্রবাহ ব্যবস্থায় ফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শরণার্থীদের নিজস্ব ভাষায় রেকর্ড করা প্রয়োজনীয় তথ্য এবং বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। ‘কোভিড ইনফো লাইন’-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের প্রশ্ন, মন্তব্য রেকর্ড করতে ও তাদের চিন্তাধারা আইওএম-এর কাছে জানাতে পারে যাতে যথার্থ উত্তর পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে সুবিধাভোগীদের কাছে আইওএম-এর জবাবদিহি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আইওএম বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ও কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেনঃ “শরণার্থীসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীদের কাছে জবাবদিহিতা আরো নিশ্চিত করতে এবং দ্বিমুখী যোগাযোগ আরো বাড়াতে আইভিআর পদ্ধতি আরেকটি পদক্ষেপ। তাদের নিজস্ব ভাষায় এবং মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই প্রশ্ন ও উদ্বেগ প্রকাশের ফলে আইওএম তার সেক্টর অনুযায়ী কার্যক্রম আরো গতিশীল করার সুযোগ পাচ্ছে।“

গত ২ জুন পর্যন্ত ২৬,০০০ এরও বেশি ‘কোভিড ইনফো লাইন’ ব্যবহারকারী নিবন্ধিত হয়েছেন। ক্যাম্পে কোভিড-১৯ এর অবস্থা, রোগ সম্পর্কে সাধারণ তথ্য ও নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে জানতে চেয়ে ব্যবহারকারীরা গত ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আইওএম-এর কাছে প্রায় ২০,০০০ বার্তা প্রদান করেছেন। এই হিসেবে প্রতি পরিবারে গড়ে একজন ব্যবহারকারী থাকলে প্রায় ১,১২,০০০ শরণার্থী তথ্য পেয়েছেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া আইওএম-কে জানিয়েছেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) এবং ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)- এর যৌথ-অনুমোদিত ৩৬টি বার্তা ব্যবহার করে সুবিধাভোগীদের কাছে ২৩৫,০০০ এরও বেশি ফোনকল করা হয়েছে। সরবরাহকৃত বার্তাগুলোর বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে ‘মৌলিক কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য’ যেমন এর লক্ষণ ও স্বাস্থ্যকর সর্বোত্তম অনুশীলন; ‘রোগ নির্ণয়, আইসোলেশন এবং কোয়ারিন্টিন’ ও এর মাধ্যমে আইসোলেশন এবং ট্রিটমেন্ট সেন্টার সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট জানানো, কোয়ারিন্টিন-এর আবশ্যকতা এবং বাংলাদেশে নিশ্চিত হওয়া রোগীদের আপডেটসহ নানা বিষয়াদি।

আইভিআর পদ্ধতির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল একটি প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য প্রবাহ তৈরি করা যা কক্সবাজার জেলাজুড়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের পক্ষে অভিগম্য হয়। তবে এই মহামারী সংকটে কার্যক্রমে ভবিষ্যতে এই পদ্ধতির সক্ষমতা এবং কাজের ক্ষেত্র আরো বাড়তে পারে। ৬১,০০০ এরও বেশি ‘কোভিড ইনফো লাইন’ ব্যবহারকারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থার বার্তা পেয়েছিল। রোহিঙ্গা সুবিধাভোগীরা প্রয়োজনীয় আশ্রয়, ওয়াশ কার্যক্রম এবং জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা শনাক্ত করতে এই যোগাযোগ চ্যানেলটি ব্যবহার করেছেন। আইভিআর পদ্ধতিটি ব্যতীত এটা হয়ত ব্যাপকভাবে সম্ভব হত না।

কক্সবাজার জেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠিদের জন্য আইওএম এই আইভিআর পদ্ধতির সুযোগ বাড়ানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে ২৯ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশে ৫৭,০০০ এরও বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছে এবং দেশে এই রোগে মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। আইওএম-এর এই মিশনের সংকটমুহুর্তকালীন যোগাযোগ ব্যবস্থায় আইভিআর পদ্ধতির অবদান অপরিসীম। যেহেতু এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়াছে, শরণার্থী শিবিরের ভিতরে-বাইরে মানসম্পন্ন তথ্য প্রয়োজনীয় লোকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এই ব্যবস্থাই হতে পারে পুরো কার্যক্রমের  মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী।