
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৫৫

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ফেনী নদীর পানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এবং বৈঠকের পর এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
এ নদীর ভাটিতে মুহুরী সেচ প্রকল্পে পানির একটা বড় উৎস ফেনী নদী। এ প্রকল্পের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধাভোগী ৬০ হাজার একর কৃষিজমি, হাজারো মৎস্য খামার। ফেনী নদীর ভাটিতে খামার গড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. সুলাইমান। তিনি জানান, তিস্তা চুক্তি ছাড়া ফেনী নদীর পানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাকে আহত করেছে। তিনি বলেন, যে পানিটা আছে তা দিয়ে এখানে মোটামুটি চলে। ইরিগেশনের কাজ চলে। তবে এখানে থেকে কেউ শেয়ার করলে অভিয়াসলি অ্যাফেক্টেড হবে।
সরকারি তথ্যমতে, ফেনী নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়ির পাহাড়ে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায়। উৎপত্তিস্থল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে এ নদী ভাটিতে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। নদীর উজানে সীমান্তবর্তী এলাকায় দেখা যায়, কোনো চুক্তি ছাড়াই নদীতে পাম্প বসিয়ে পানি তোলে ভারত। অথচ অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় চাইলেই নদীতে পাম্প বসিয়ে পানি তুলতে পারেন না বাংলাদেশের কৃষকরা।
স্থানীয় একজন পানির এক মোটা একটা পাইপ (ভারতীয় অংশে) দেখিয়ে বলেন, এই যে পানির লাইনটা দেখতেছেন, ২০০২ সাল থেকে এরা পানি বহন করতেছে। ওরা সরকারিভাবে এই পানি নিতেছে। জানা যায়, বাংলাদেশ অংশে এমন পানির পাম্প আছে মাত্র তিনটি। রামগড়ে অবস্থিত ৪৩ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফ. কর্নেল তারেকুল হাকিম বিবিসিকে জানান, সীমান্ত ৩৬টি পাম্প মেশিন দিয়ে পানি তুলছে ভারত। নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে এগুলো সরিয়ে নিতে বিএসএফ এর সঙ্গে বৈঠকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও পানি তোলা বন্ধ হয়নি।
পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক ম ইনামুল হক ভারতের এই পানি তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, নদী থেকে খুব সহজেই পানি তোলা যাচ্ছে, ডিপে যাওয়া লাগছে না। এক একটা পাম্প মিনিমাম দুই কিউসেক। যদি ৩৬টা পাম্প হয়ে থাকে তো ৭২ কিউসেক পানি তারা অলরেডি তুলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের হিসেবে, বর্ষা মৌসুমে এ নদীর পানিপ্রবাহ থাকে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কিউসেক। আর শুষ্ক মৌসুমে থাকে প্রায় ৫০ কিউসেক। তবে ভারতীয় তথ্যে, শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ থাকে ১০৯ কিউসেক।

ওয়ারপোর সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হক বলেন, ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নেওয়ার যে চুক্তি হয়েছে সেটা তেমন কোনো ক্ষতি করবে না। ১২০ কিউসেক পানি আমাদের ছিল, সেটা এখন ৫০-এ নেমে এসেছে। কিন্তু ১.৮২ কিউসেক যদি হয় একটা পাম্পের জন্য, তাহলে ভারত অবৈধভাবে যে ৩৬টি পাম্প বসিয়ে পানি নিচ্ছে সে বিষয়ে কী ব্যবস্থা।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব