
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৩

গ্রিন সিটি বা সবুজ নগর—বাংলাদেশের জন্য খুব পরচিত ধারণা। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে আমাদের শহরগুলো যে অবস্থায় ছিল সেগুলোকে আমরা সত্যিকারের সবুজ নগর বলতে পারতাম। আমাদের সবচেয়ে বৃহৎ শহর ঢাকায় প্রচুর গাছপালা ও সবুজায়নে ভরপুর ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ধানমন্ডিকে সবুজায়ন করতে আমাদের এমপি মহোদয় ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা ১০ আসনকে গ্রীন এন্ড ক্লিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তারমধ্যে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে থাকছে আমার ধানমন্ডির ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড।
ইনিউজ৭১: আপনি কেমন আছেন?
জাকির হোসেন স্বপন: ভালো।
ইনিউজ৭১: আপনার পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বলুন?
জাকির হোসেন স্বপনঃ আমরা প্রায় ২০০ বছর যাবত ধানমন্ডিতে থাকি। আমাদের আদি বাড়ি বিক্রমপুরে। আমারা চার ভাই এবং আমার বাবা এখনও জীবিত আছেন, আমার দাদার বাবার নামে এই ধানমন্ডিতেই একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে এবং তার নামে একটি মসজিদ ও আছে। ব্যক্তিগত জীবনে আমি ব্যবসার করার পাশাপাশি রাজনীতি করি এবং আমি ছাত্র জীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ২০০৪ সালে আমি ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। আমার পরিবারে স্ত্রী ও তিন কন্ন্যা সন্তান আছে। ১৯৯২ সালে আমি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই এরপর ১৯৯৪ সালে উচ্চ ম্যাধ্যমিক পাস করি। পরবর্তীতে আমি ডিগ্রী পর্যন্ত লেখাপড়া করি।
ইনিউজ৭১: আপনার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান এবং পতন সম্পর্কে বলুন?
জাকির হোসেন স্বপনঃ বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রথম পা রাখা। ১৯৯১ সালে বিএনপি স্বৈরাচারী সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন থেকেই আমি রাজনীতি করি। এরপর উপ-নির্বাচনে আলহাজ্ব মকবুল হোসেন আসার পর থেকেই আমি রাজনিতীতে সক্রিয়। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে তখন আমাকে ও আমার পরিবারকে চরম নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয় এবং বিভিন্ন মামলায় আমাকে আসামী করে ও একটি মামলায় আমাকে প্রায় দেড় মাস জেল খাটতে হয়। এর আগে ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন আমরা অনেক ভালো ছিলাম। ১৯৯৪ সালে আমি এই ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহব্বায়কের দায়িত্ব পালন করি এবং পরবর্তীতে ২০০৪ সালে যখন বিএনপি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন শুরু হয় তখন আমাকে একজন পরিক্ষীত নেতা হিসেবে ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৫ সালে মাননীয় এমপি মহোদয় ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আমাকে এই ১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচন পদে নমিনেশন দেয় এবং ঢাকা দক্ষিনের ৫৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই।
ইনিউজ৭১: ডেঙ্গু নিরসনে বিশেষ কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
জাকির হোসেন স্বপন: আমাদের মেয়র সাইদ খোকন সাহেবের গাইড লাইনের পরেও আমাদের পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে আমরা সঠিক সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু করতে পারিনি। আমার ওয়ার্ডের ১৮৭৪ টি বাড়িতে ভিজিটে গিয়ে আমরা ডেঙ্গুর লার্ভা পেয়েছিলাম। গতমাসেও আমরা ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে সচেতন করতে ৩৩৭৪ বাড়িতে ভিজিট করেছি এবং ডেঙ্গুর লার্ভা পেয়েছি ১০২ টি বাড়িতে।
আমার ওয়ার্ডের যতগুলি প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজ় আছে সেখানকার সবাই আমাদেরকে সহযোগিতা করছে, তারা স্কুলের চারপাশ পরিস্কার রাখছে এবং ডেঙ্গু নিরসনে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং তাদেরকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করছে। আমার ওয়ার্ডের যারা দলীয় লোকজন আছে এবং কিছু সেচ্ছাসেবক লোক নিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে আমরা মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। আমি নিজেও আমার ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়ির ছাদে গিয়েছি কিন্ত আমরা সেখানে ডেঙ্গুর লার্ভার কোনো অস্তিত্ব পাইনি। আমরা ডেঙ্গুর লার্ভা পেয়েছি পরিত্যক্ত বাড়ীতে ময়লা আবর্জনার স্তুপে। একটা সময় ধানমন্ডি গার্লস স্কুলের সামনে ময়লার যে ডাম্পিং স্টেশন গুলো ছিলো এখন কিন্তু সেগুলো নেই কিংবা ৩২ নাম্বার ব্রীজের পাশেও কেউ রাতের আধারে আর ময়লা ফেলছে না। নিয়মিত মশা নিরোধক ঔষধ দেয়া হচ্ছে ১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের এবং যেখানে ভয়াবহ ডেঙ্গুর লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে খুব দ্রুতই আমরা সেখানে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
ইনিউজ৭১: কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনো অভিযান সম্পর্কে কি আপনি অবগত?
জাকির হোসেন স্বপন: না।
ইনিউজ৭১ঃ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন?
জাকির হোসেন স্বপনঃ ভালো একটা উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে। এই উদ্যোগ সফলভাবে পরিচালিত ও বাস্তবায়ন দেখতে পারলে দেশের যুব সমাজকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। আমার ওয়ার্ডে মাদকের কোনো স্পট নেই। আপনারা জানেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার রাজধানী ধানমন্ডি। এই ধানমন্ডি লেকে প্রতিদিন সকাল-বিকাল প্রায় লক্ষাধিক লোকজনের আসা যাওয়া এবং রবিন্দ্র সরোবর ধানমন্ডির মানুষের একটা আড্ডার স্থান। মাঝে মাঝে এই লেকের পাশে বা রাস্তার পাশের গলিতে কিছু মাদকসেবী অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয়। আমরা এই বিষয় গুলো সম্পর্কে উদ্বিগ্ন এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছি। আমরা আরও সচেতনতামূলক উদ্যোগ হাতে নিয়েছি মাদকের বিরুদ্ধে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের ধানমন্ডির প্রশাসন অত্যান্ত সচেতন ও মাদক নির্মুলে যেকোনো ইস্যুতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
ইনিউজ৭১: কাউন্সিলর হিসেবে আপনার প্রাপ্তি গুলো কি কি?
জাকির হোসেন স্বপন: আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিটা হচ্ছে ধানমন্ডি লেকের পাশে এলইডি লাইট গুলো খুবই চমৎকারভাবে জ্বলছে এবং প্রায় ৭-৮টা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে। ধানমন্ডিতে যত্রতত্র আর ময়লা ফেলানো হচ্ছে না কলাবাগান মাঠের পাশে নির্দিষ্ট একটা স্থানে সব ময়লা গুলো ফেলা হচ্ছে। পানির সমস্যা নেই এগুলো আমার একটা বড় প্রাপ্তি।
ইনিউজ৭১: কাউন্সিলর হিসেবে আপনার অপ্রাপ্তি গুলো কি?
জাকির হোসেন স্বপন: আমার ধানমন্ডিতে একটি স্থায়ী বাজার নেই যেখানে মানুষ বাজার করবে, একটি মাতৃসদন নেই যেখানে আমার গরীব দুঃখী মানুষেরা চিকিৎসা নিবে ও স্থায়ী কমিউনিটি সেন্টার নেই। এগুলো আমার একটা বড় অপ্রাপ্তি। আমাদের এমপি মহোদয় ইতিমধ্যে ধানমন্ডিতে একটি স্থায়ী বাজার, একটি মাতৃসদন ও একটি কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
ইনিউজ৭১: আগামী নির্বাচনে কি আপনি অংশগ্রণ করবেন?
জাকির হোসেন স্বপন: দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, যদি মনে করে আমার বিগত কর্মকান্ড ভালো এবং দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো।

জাকির হোসেন স্বপন: আমি সবসময় মনে করি পরিশ্রম মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌছে দেয়, আমি সবসময় পরিশ্রম করতে প্রস্তুত। আমার রাত আর দিন নেই, এই ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য আমি আমার অপ্রাপ্তি গুলো নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আরও উদ্ভাবনী কাজ করার মধ্য দিয়ে জনগণের পাশে থাকতে চাই।
ইনিউজ৭১: ধানমন্ডিকে কেন গুলশান, বনানী বানানো যাচ্ছে না?
জাকির হোসেন স্বপন: আপনারা যানেন ধানমন্ডি বাংলাদেশের একটি সর্বপ্রথম আবাসিক এলাকা এবং এই এলাকার বেশির ভাগ বাড়ির মালিক দেশের বাহিরে থাকে। একটা সময় সরকার কঠোর না হওয়ায় বাড়ির মালিকরা রাজউকের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও কমার্শিয়াল স্পেস করে নেয়। আমাদের এই ধানমন্ডিতে রোড নাম্বার ১০/এ তে কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে তারা একটা মামলা করেছে ধানমন্ডিতে আবাসিক এলাকায় সকল প্রকার কমার্শিয়াল স্পেস গুলা সরিয়ে ফেলতে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সেটাই চান। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও এই মামলাটার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে মামলার একটি রায় হয়েছে আগামি তিন বছরের মদ্ধ্যে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার সকল প্রকার বাণিজ্যিক স্থাপনা সরাতে হবে। আমরা চেস্টা করছি আমাদের এমপি মহোদয় সহ ধানমন্ডীতে এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলো সরানোর। উত্তরা, বনানী এইগুলা নতুন শহর এইগুলার বয়স খুব বেশি না পরিকল্পিত, পাশাপাশি গুলশান ডিপ্লোমেটিক জোন তারা বিভিন্ন চাপে গুলশানকে দৃস্টিনন্দন করছে। কিন্তু ধানমন্ডি অনেক পুরনো হওয়ায় এবং যেহেতু এইটা কমার্শিয়াল এলাকা হয়ে গেছে এই কারণে আমাদেরকে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আমরা ধানমন্ডিকে গুলশান, বনানীর থেকেও সুন্দর করবো। ইতিমধ্যে আমাদের এমপি মহোদয় ঢাকা ১০ আসনকে গ্রীন এন্ড ক্লিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, তারমধ্যে পাইলট প্রজেক্ট আমার ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড।
জাকির হোসেন স্বপন: ২০০২ সালে ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়। এরপর ২০০৪ সালে ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার আগের দিন কেউ একজন আমাকে বলছিল যে আমি কমিটিতে নেই। তখন আমি এবং আমার অনেক সমর্থকেরা কান্নায় ভেঙ্গে পরি। পরেরদিন যখন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে বলে তোমাদের কমিটি পাশ হয়ে গেছে তখন আমি ভীষণ আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত হই। এই ঘটনাটা আমার জীবনের ঘটে যাওয়া সেরা একটা ঘটনা।
ইনিউজ৭১: আপনাকে ধন্যবাদ।
জাকির হোসেন স্বপন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আহাদ সাগর