
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:২১

লজ্জা ও একটি থাপ্পড়। আমার ছোটবেলায় বরিশাল শহরে আমাদের পশু হাসপাতাল গলি দিয়ে চলার সময় মাঝে মাঝে দেখতাম পাশের ছোট মাঠে দুইটি কুকুরের পেছন ভাগ আটকে রয়েছে। প্রথমবার যখন দেখি তখন আমি বরিশাল জিলা স্কুলের নিচু শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের গলির হামিদ স্যারের ছেলে পাড়ার কলেজ পড়ুয়া হিরু বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা কুকুর দুটি আটকে আছে কেন? উনি কাছে এসে আমার কানের উপর একটি মাঝারি সাইজের থাপ্পড় দিয়ে বললেন, এসব লজ্জার জিনিষ, কোনদিন তাকাবিনা, মনে থাকে যেন। কান ডলতে ডলতে ঘন্টা খানেক পরে স্কুলের ইচড়ে পাকা বন্ধু মোহনকে ঘটনা খুলে বলেছিলাম, --হিরু ভাই কোন লজ্জার জন্যে থাপ্পড়টা মারলেন? বল দেখি।
মোহন আমাদের দেয়া উপনাম পঁচা বললো, তোকে বলা যাবেনা তুই স্কুলের মসজিদে আজান দিস, লজ্জার কথা। উল্লেখ্য, আমি ক্লাস ফোর থেকেই বরিশাল জিলা স্কুলের মসজিদে জোহরের আজান দিতাম। অনেকদিন পরে যখন কৌতূহল নিবারণ হয়েছিল তখন আমি সত্যিই লজ্জা পেয়েছিলাম তবে একটি কথা বুঝেছিলাম, পশুপাখি মানুষের সামনে কোনো কিছু করতে লজ্জা পায় না; আর মানুষ মানুষ হয়েছে কারণ তাঁদের লজ্জা আছে। অভিধানে লজ্জা শব্দ খুঁজলে দেখতে পাই, এর অর্থ হচ্ছে, "গোপনীয় বিষয় প্রকাশিত হওয়ার জন্য বা অনুচিত ও অশোভন কাজ বা ব্যাপারের জন্য অস্বস্তিজনক ভাব, শরম, ব্রীড়া; অস্বস্তির জন্য কোনো কথা বলতে বা কোনো কাজ করতে মানসিক বাধা, সংকোচ, কুণ্ঠা।" বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, অনেক অনেক উঁচু নিচু ইমারত দেখি কিন্তু দুটি ব্যপারে কারো লজ্জা দেখিনা, একটি দুর্নীতি করতে আর একটি মিথ্যা কথা বলতে।
"লজ্জাই নাকি সভ্যতা। আমাদের সেটি নেই। ওপরতলার অনেক মানুষের দেখাদেখি পুরো সমাজটাই নির্লজ্জ হয়ে উঠেছে। এখন প্রায় সব মানুষ অপকর্ম করে কারণ কারো লজ্জার ভয় নেই।" পশুগলির সেই আটকে থাকা কালো আর লাল কুকুরটির কথা আজকাল মনে পড়ে প্রায়শঃই, কিন্তু লজ্জা শেখানোর জন্যে প্রতিবেশীর ছেলেকে থাপ্পড় দেবার মত হিরু ভাইয়েরা এখন কেউ কোথাও নেই, আর কোনদিন আসবেও না। ১৮৬০ সনে জার্মান চিত্রশিল্পী জুলিয়াস সনোর ভন কার্লসফেল্ড বাবা আদম ও মা হাওয়ার লজ্জা পেয়ে হেভেন থেকে বিতাড়িত হবার ছবি অলংকরণ করেছিলেন একটি গ্রন্থে, নাম 'Die Bibel in Bildern' বা ছবিতে বাইবেল। লক্ষ্যনীয় বাবা আদম লজ্জায় মুখ ঢাকলেও মা হাওয়া মুখ ঢাকেননি, শুধু চেহারাটা একটু বিষণ্ণ এই যা। শিল্পী কি বোঝালেন এই ছবিতে তা বলার জন্য তিনি আর এই পৃথিবীতে নেই।

ইনিউজ ৭১/এম.আর