ভূঞাপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কারনে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি ২২ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: রবিবার ৩০শে জুন ২০২৪ ০৬:২৩ অপরাহ্ন
ভূঞাপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কারনে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি ২২ শিক্ষার্থী

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ক‌লেজ কর্তৃপক্ষের জালিয়াতি, অনিয়ম ও এক শিক্ষকের প্রতারণার কার‌ণে ২২ জন শিক্ষার্থী টাকা জমা দিয়েও চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কর‌তে পা‌রে‌ননি বলে অভিযোগ উঠেছে  নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজের বিরুদ্ধে। 


রবিবার (৩০ জুন ) সকা‌লে পরীক্ষা শুরুর আগে ওই কলেজের ২২ জন পরীক্ষার্থী নিকরাইলের পল‌শিয়া রানী দীনম‌নি উচ্চ বিদ‌্যাল‌য় কে‌ন্দ্রে গি‌য়ে আন্দোলন ও ভাঙচুর করে। এতে পু‌লি‌শের সঙ্গে পরীক্ষার্থী‌দের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। প‌রে অতি‌রিক্ত পু‌লিশ ঘটনাস্থলে গি‌য়ে প‌রি‌স্থি‌তি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তিসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।


স‌রেজ‌মি‌নে দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় কেন্দ্রের বাইরে গে‌টে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ সময় অভিভাবকরাও কে‌ন্দ্রের বাহিরে পরীক্ষার্থী‌দের সান্ত্বনা দি‌চ্ছেন আর দোষী‌দের বিরু‌দ্ধে শা‌স্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহ‌ণের জোর দাবি জানা‌চ্ছেন।


জানা যায়, উপ‌জেলার নিকরাইল শম‌সের ফ‌কির ডিগ্রি ক‌লে‌জ কর্তৃপক্ষ এইচএস‌সি পরীক্ষার জন‌্য নির্ধা‌রিত টাকার চে‌য়ে বাড়‌তি টাকা দাবি ক‌রে। এতে অনেক শিক্ষার্থী বাড়‌তি টাকা দি‌তে অস্বীকার ক‌রে। প‌রে ওই ক‌লে‌জের বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হো‌সেন ২২ জন পরীক্ষার্থীর কাছে টাকা করে নেন ফরম পূরণের জন‌্য। কিন্তু পরব‌র্তীতে ওই শিক্ষার্থী‌দের বোর্ড থে‌কে কোনো রে‌জি‌স্ট্রেশ‌ন কার্ড বা প্রবেশপত্র দেওয়া হয়‌নি।


গত শ‌নিবার (২৯ জুন) ২২ জন পরীক্ষার্থী ক‌লে‌জে প্রবেশপত্র নিতে গে‌লে তা‌দের ফরম পূরণ হয়নি ব‌লে জা‌নি‌য়ে দেওয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ। এসময় কলেজেই বিক্ষোভ করে ওই শিক্ষার্থীরা। প‌রে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক লোকমান হো‌সেনের সঙ্গে যোগা‌যোগ ক‌রলেও কোনো সুরাহা হয়‌নি। পরে রবিবার (৩০ জুন) সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে যায় ওই ২২ শিক্ষার্থী। সহপাঠীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও প্রবেশপত্র না থাকায় গেটেই আটকে দেয়া হয় তাদেরকে। ক্ষুব্ধ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা। ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তিসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।


পরীক্ষার্থীরা জানায়, কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবিকৃত ৮ হাজার টাকা দি‌তে না পারায় ফরম পূরণ করতে পারিনি। প‌রে ক‌লে‌জের বাংলা প্রভাষক লোকমান হোসেন (স্যারের) মাধ্যমে ফরম পূরণ করে জালিয়াতির শিকার হ‌য়ে‌ছি। টাকা দি‌য়েও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কর‌তে পারলাম না। এই কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষ‌কের প্রতারণার কার‌ণে আমা‌দের ভ‌বিষ‌্যৎ নষ্ট হ‌য়ে যা‌বে। আমরা যেকোনো মূ‌ল্যে পরীক্ষা দি‌তে চাই।


এবিষয়ে শম‌সের ফ‌কির ডিগ্রি ক‌লে‌জের ভারপ্রাপ্ত অধ‌্যক্ষ মোঃ আক্তারুজাজামান জানান, শিক্ষার্থী‌রা ক‌লে‌জে‌ কোনো যোগাযোগ করেনি। অনেক শিক্ষার্থী‌কে বিনামূ‌ল্যে ফরম পূরণ করা হ‌য়ে‌ছে। বাড়‌তি ফি নেওয়া হয়‌নি। শিক্ষার্থী‌দের অভিযোগ সত‌্য নয়।


ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ জানান, পরীক্ষা দি‌তে না পারা শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হ‌য়ে কে‌ন্দ্রে আন্দোলন ক‌রে। ‌প‌রে কেন্দ্রে অতিরিক্ত পু‌লিশ মোতা‌য়েন ক‌রে প‌রি‌স্থি‌তি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানান, কলেজের ২২ জন শিক্ষার্থী এইচএস‌সির ফরম পূরণ ক‌রা হ‌য়েছে ব‌লে ক‌লেজ অধ‌্যক্ষ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লি‌খিত অভিযোগ ক‌রে। প‌রে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ওই ২২ জন পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণ বা‌তিল করায় তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কর‌তে পার‌ছে না। তবে শিক্ষার্থী‌দের অভিযোগ খ‌তি‌য়ে দে‌খে দোষী‌দের বিরু‌দ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হ‌বে।