এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ আসবে, রিজওয়ানা হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ১৫ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৭:০৫ অপরাহ্ন
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ আসবে, রিজওয়ানা হাসান

পদক্ষেপ গ্রহণে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে, যেখানে চারটি কমিশন তাদের দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আগামী এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। 


ঢাকায় ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একটি সাংবাদিক ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানিয়ে দেন, জমা হওয়া প্রতিবেদনের সারমর্ম জনগণের কাছে উন্মুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, “সরকারের সংস্কারের প্রচেষ্টা এবং সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হবে।”


রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, "যে কমিশনগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাদের প্রধানরা স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন। এখন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবেন এবং ঠিক করবেন, কিসে গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।" তিনি জানান, এগুলোর আলোচনায় এখন নতুন দিক দেওয়া হবে এবং পরবর্তী মাসের মধ্যে এসব রিপোর্টের ভিত্তিতে আইন সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


এ সময় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, "আমাদের পরিকল্পনায় চারটি ধাপ ছিল। প্রথমে কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন প্রদান করবে, তারপর তা নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা হবে। পরবর্তী ধাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণ হবে। আমাদের প্রত্যাশা, যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারে, তাহলে পুরো প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে।"


এ বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, "সংস্কারের এই প্রক্রিয়া মূলত একটি গণঅভ্যুত্থান এবং আমাদের এর মূল চেতনা ও আকাঙ্ক্ষাকে মনে রেখে কাজ করতে হবে।" তিনি আরো বলেন, সকল রাজনৈতিক দলই তাদের মতামত প্রদান করেছে এবং এসব প্রতিবেদনেই সে মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এটি একমাত্র শেষ প্রক্রিয়া নয়, আরও কিছু পর্যায়ে আলোচনা চলবে।


এ সময় তিনি আরো জানান, কমিশনগুলো যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর লেখা মতামতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এসব প্রতিবেদন নিয়ে আরও আলোচনার পর্যায় আসবে। তবে, সকলের কাছে মূল উদ্দেশ্য থাকবে – স্বচ্ছ ও ফলপ্রসূ সংস্কার।


রিজওয়ানা হাসান একই সাথে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বলেন, “এখানে কোনও দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা একপেশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা শুধুমাত্র একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি।” তিনি আরো বলেন, "এটি সরকার নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত যে তারা কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলিরই।”


ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যরা।


এমতাবস্থায়, কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের সারমর্ম জনসম্মুখে তুলে ধরার পর জনগণ থেকে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ বিষয়ে মতামত প্রদান করলেও, এখন সবকিছুর ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সরকারের সংস্কারের রোডম্যাপ কি ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে, তা এখনো পরিস্কার নয়। তবে এ উদ্যোগ সফল হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা তেমনভাবে উন্নত হতে পারে।


এদিকে, সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে আলোচনা আরো তীব্র হয়েছে। প্রতিটি দলের নেতারা নিজেদের পক্ষে দাবি তুলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত রোডম্যাপটি কী রূপে গঠন হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। 


এবারে, সেই পরিস্থিতি কী হবে যখন দেশজুড়ে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হবে, এই প্রশ্ন অনেকেই মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে চূড়ান্ত সমঝোতা সৃষ্টি হবে, এমন আশার কথা শোনা যাচ্ছে।


এরই মধ্যে সবার নজর রয়েছে, এক মাস পর প্রকাশিত সংস্কারের রোডম্যাপ কীভাবে দেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।