গীবত: মহাপাপ, কোরআন ও হাদিসের আলোকে সতর্কবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:২২ পূর্বাহ্ন
গীবত: মহাপাপ, কোরআন ও হাদিসের আলোকে সতর্কবার্তা

ইসলামে ‘গীবত’ বা পরনিন্দাকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে এটি হারাম এবং কবিরা গুনাহ। কোরআনে সুরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, *“তোমরা একে অপরের দোষ খুঁজে বের করো না এবং কেউ যেন কারও গীবত না করে।”* গীবতকারীদের জন্য শাস্তি সম্পর্কে কোরআনে আরও উল্লেখ রয়েছে সুরা হুমাজায়, যেখানে বলা হয়েছে, *“দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা সম্মুখে ও পশ্চাতে নিন্দা করে। তারা হুতামাতে নিক্ষিপ্ত হবে, যা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি।”*  


হাদিসের বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “গীবত হলো এমন কথা বলা, যা শুনলে অন্য কেউ অপছন্দ করবে। যদি সেই দোষ বাস্তবেও তার মধ্যে থাকে, তবে তা গীবত, আর যদি না থাকে, তবে তা মিথ্যা অপবাদ।” (মুসলিম)। এমনকি গীবতকারীদের জন্য কঠোর শাস্তি সম্পর্কে উল্লেখ আছে, মিরাজে রাসুলুল্লাহ (সা.) দেখেছেন, একদল লোক নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুক ক্ষতবিক্ষত করছে। জিবরাইল (আ.) জানিয়েছেন, এরা সেইসব লোক, যারা দুনিয়ায় মানুষের গীবত করত।  


গীবত কেবল একজনের মানহানি নয়, বরং এর প্রভাব আখিরাতেও ভয়াবহ। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, *“গীবতের পাপ ক্ষমা পেতে হলে, যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”* অথচ অনেকেই এই পাপকে তুচ্ছ মনে করেন। হাদিসের আরেক বর্ণনায় এসেছে, কিয়ামতের দিন গীবতকারীকে পচা মাংস খেতে বাধ্য করা হবে।  


গীবত শুধু কথার মাধ্যমে নয়, ইঙ্গিত, লেখা, এমনকি অঙ্গভঙ্গিতেও হতে পারে। এ কারণে গীবত শোনা এবং করা সমান অপরাধ। যখন কেউ গীবত করে, তখন তাকে থামতে বলা এবং আল্লাহর হুকুম স্মরণ করানো প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেছেন, *“যে ব্যক্তি গীবত থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সেরা স্থানে স্থান দান করবেন।”*  


আমাদের উচিত, গীবত করা থেকে বিরত থাকা এবং অন্যদেরও এ কাজে নিরুৎসাহিত করা। হাদিসের নির্দেশ অনুযায়ী, গীবতের কাফফারা হলো, যার গীবত করা হয়েছে, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা। আল্লাহ আমাদের এ ভয়াবহ পাপ থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমিন।