বেনাপোল-পেট্রাপোল: দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:২০ অপরাহ্ন
বেনাপোল-পেট্রাপোল: দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অনির্দিষ্টকালের ডাকা ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবারও সকাল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামালসহ পচনশীল পণ্য রয়েছে।

 

তবে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দরে লোড-আনলোডসহ বন্দর ও কাস্টমসের সব কার্যক্রম সচলসহ দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রীদের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।


সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব পক্ষ আলোচনায় বসলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর, কাস্টমস, বিএসএফ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা তাদের নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকায় বিষয়টির সুরাহা হয়নি। আজ মঙ্গলবার আবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।  


ভারতীয় বিএসএফ ও পেট্রাপোল ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নব মালিক সমিতি, বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সীমান্ত পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনসহ একাধিক সংগঠন সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেয়। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধে যোগ দেয় পেট্রাপোল সীমান্তে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক।


পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিংয়ের (ল্যান্ড পোর্ট) নতুন ম্যানেজার কমলেশ সাইনীর খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের। সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, করোনার আবহে এমনিতেই তাদের আয় কমে এসেছে। নতুন ম্যানেজার তাদের সঙ্গে কথা না বলে নতুন নতুন আইন তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, নতুন ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে পরিবহনকর্মীরা অভিযোগ এনেছেন যে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে (বিএসএফ) কাজে লাগিয়ে তাদের পোর্টের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এসবের প্রতিবাদে এবং শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি সামনে রেখে এই কর্মবিরতি শুরু করেছেন আটটি সংগঠনের কয়েক হাজার শ্রমিক।  


পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, কভিড-১৯-এর কারণে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ থেকে ৭৫০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করত।   করোনার কারণে এখন মাত্র সাড়ে ৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এরপর নতুন ল্যান্ড পোর্ট ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের কোনো কথা না বলে বন্দর এলাকায় প্রবেশের ওপর নতুন নতুন আইন তৈরি করে আমাদের বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। নতুন ম্যানেজার বিএসএফকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন কর্মীদের বন্দরের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। পরিবহন কাজে জড়িত কর্মীদের আইসিপিতে প্রবেশের মুখে বিএসএফের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। যা এর আগে কখনো হয়নি। কয়েক হাজার শ্রমিক ও সীমান্তের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। এসব হয়রানির প্রতিবাদে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা হলেও ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ম্যানেজার তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। আমদানি-রপ্তানি কাজে বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশসহ নানা হয়রানি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এর সমাধান দ্রুত না নিলে এশিয়ার বৃহত্তম বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর মুখ থুবড়ে পড়বে।  


ওপারের একটি সূত্র জানায়, পেট্রাপোল স্থলবন্দরের বর্তমান ম্যানেজার কমলেশ সাইনী বলেন, সীমান্তের শ্রমিক সংগঠনের কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি এবং বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বৈঠকের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। আমদানি-রপ্তানি কাজে যাতে কোনো বাধা না আসে, সেই দিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিএসএফ এবং কাস্টমস যৌথভাবে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সীমান্ত বাণিজ্যে গতি আনার কথা বলেন।


ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আইসিপি-পেট্রাপোলে একাধিক চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে। সেই সব নজরে আসতেই, বিএসএফ তাদের নজরদারি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা আরো কড়াকড়ি করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিবহন কর্মীদের সেখানে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।


বিএসএফ সাফ জানিয়েছে, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালককে কোনোভাবেই বাংলাদেশে যেতে দেওয়া যাবে না। কারণ এ ধরনের চালকরা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে শুল্ক বিভাগ থেকে গাড়ির পাস নেয়, যার ভিত্তিতে বিএসএফ ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, বিএসএফ বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি স্থায়ী অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে। যাতে দেশের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের সঙ্গে আপস করা না হয়। এখন দেখার বিষয় হলো- বন্ধের জেরে প্রশাসন কতটা নড়েচড়ে বসে এবং শ্রমিক সংগঠনের দাবি মেনে কবে স্বাভাবিক হয় পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির কাজ।


বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের অনেক আমদানিকারকের পণ্য চালান পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে। সেই সঙ্গে রপ্তানির জন্য আসা শত শত ট্রাক সীমান্তে পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব পণ্য চালানের মধ্যে গার্মেন্টস শিল্পের অনেক কাঁচামাল রয়েছে। অনেকের শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।  


বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন তরফদার বলেন, ভারতের পেট্রপোল বন্দরে ধর্মঘটের কারণে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে তারা বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও বন্দরে লোড-আনলোড প্রক্রিয়া ও উভয় দেশের পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক গতিতে চলছে। তারা মালামাল দিলে আমরা যেকোনো সময় নিতে প্রস্তুত আছি।