প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১২:১৪
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি মনে করে, এসব সিদ্ধান্ত দেশের মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে তারা গণতন্ত্রবিরোধী মনে করছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, চলতি বছরের ১২ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করে সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশসহ প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে শুধু একটি রাজনৈতিক দলই নয়, বরং বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতপ্রকাশের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
সংস্থাটি বলছে, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির ছিল। গুমের মতো অপরাধে যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গুম প্রতিরোধে প্রস্তাবিত আইন আন্তর্জাতিক মান পূরণে ব্যর্থ, যা ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়ার পথ রুদ্ধ করছে।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রক্ষায় বর্তমান আইনি কাঠামো যথেষ্ট নয়। এমন আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও দলটির নিবন্ধন বাতিল নিয়েও প্রতিবেদনটিতে অসন্তোষ জানানো হয়। বলা হয়, বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যত একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার নামান্তর।
সংস্থাটি মনে করে, ১৯৭১ সালের আগ থেকেই যেসব রাজনৈতিক শক্তি এ দেশে সক্রিয়, তাদের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে সরকার জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে। এভাবে কোটি কোটি মানুষের রাজনৈতিক অধিকারকে সীমিত করা কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের আচরণ নয়।
যদিও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তথাপি একটি দলের কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে তারা গণতন্ত্রবিরোধী বলেই মনে করছে। সংস্থাটির ভাষায়, এটি মূলত বিরোধী মত দমনের পুরনো প্রবণতারই আধুনিক প্রতিফলন।