কোন সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: সোমবার ১০ই মার্চ ২০২৫ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
কোন সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ?

জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান যা ধনী মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। এটি নির্দিষ্ট সম্পদের ওপর প্রযোজ্য এবং এর কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন, কোনো ব্যক্তির সম্পদ যদি চান্দ্র বছরের জন্য তার মালিকানায় থাকে, নিসাব পরিমাণ হয় এবং মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত হয়, তবে সেই সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়। নগদ টাকা, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক মালামাল, গবাদি পশু ও কৃষিজ ফসলের ওপর জাকাত দিতে হয়, তবে ব্যবহৃত বাড়ি, যানবাহন বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্রের ওপর জাকাত নেই।  


কৃষিজ পণ্যের ক্ষেত্রে সম্পদ এক বছর থাকার শর্ত নেই। ফসল আহরণের পরই উশর দিতে হয়। মোট সম্পদের ২.৫ শতাংশ জাকাত নির্ধারিত এবং এটি নগদ বা সম্পদ আকারে প্রদান করা যায়। মহিলাদের অলংকার যদি নিসাব পরিমাণ হয়, তবে তার ওপরও জাকাত ফরজ। কোনো ব্যক্তির বিভিন্ন সম্পদ মিলিয়ে নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে, এমনকি পৃথকভাবে কোনো সম্পদ নিসাব পরিমাণ না হলেও।  


বাজারদর অনুযায়ী রুপার মূল্যের ভিত্তিতে নগদ অর্থের জাকাত নির্ধারণ হয়। স্বর্ণের ক্ষেত্রে খাদ মিশ্রিত হলেও সম্পূর্ণ স্বর্ণ হিসেবেই জাকাত দিতে হবে। ডায়মন্ড বা শাড়ির ওপর জাকাত আসে না, যদি তা ব্যবসার জন্য না হয়। বছরের মাঝখানে সম্পদ কমে গেলেও শুরু ও শেষে নিসাব থাকলে জাকাত ফরজ হয়। ব্যবসার জন্য কেনা জমির ওপর প্রতি বছর বাজারদরের ভিত্তিতে জাকাত দিতে হবে, তবে বিনিয়োগের জন্য জমি থাকলে বিক্রির পর নিসাব পরিমাণ হলে তবেই জাকাত আসবে।  


ফসল উৎপাদিত জমিতে উশর দিতে হয়, জাকাত নয়। বিক্রির পর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত আসবে। ব্যবসার মালামাল নিসাব পরিমাণ হলে বছর শেষে তার ওপর জাকাত দিতে হবে। ঋণ থাকলে তা বাদ দিয়ে যদি নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকে, তবে জাকাত ফরজ হবে। কাউকে ধার দেওয়া টাকার ওপরও জাকাত দিতে হয়, তবে পাওয়ার পর আগের বছরগুলোর হিসাব অনুযায়ী আদায় করতে হবে।  


কারখানার মেশিন, ভবন বা ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত যানবাহনের ওপর জাকাত নেই, তবে উৎপাদিত পণ্যের ওপর আছে। ভাড়ার জন্য ব্যবহৃত সম্পত্তির মূল্যের ওপর জাকাত নেই, তবে উপার্জিত অর্থ নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত ফরজ হবে। কোনো সম্পদের জাকাত না দেওয়ার পর যদি সেটি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তার জাকাত দিতে হবে না, তবে বিলম্বের জন্য তওবা করা জরুরি।  


ব্যাংকে রাখা টাকা নিসাব পরিমাণ হলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে, তবে সুদের টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করতে হবে, কারণ সুদের টাকার ওপর জাকাত ফরজ নয়। ঘর নির্মাণের জন্য জমাকৃত টাকার ওপর বছর পার হলে জাকাত ফরজ হবে, তবে নির্মাণসামগ্রী কেনার আগে তা পরিশোধ করতে হবে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী সম্পদের সঠিক হিসাব রেখে সময়মতো জাকাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।