যশোরে মুরগির খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় পোল্ট্রি শিল্পে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর পর বাংলাদেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যশোর জেলার একটি খামারে তিন হাজার ৯৭৮টি মুরগির মধ্যে এক হাজার ৯০০টি মারা গেছে, বাকিগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম বার্ড ফ্লু শনাক্ত হলো, যা খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এই ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পোল্ট্রি শিল্প ইতোমধ্যেই নানা সংকটে জর্জরিত, এবার বার্ড ফ্লু প্রাদুর্ভাব শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
বিপিএ’র সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, যশোরে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় পুরো শিল্পের জন্য হুঁশিয়ারি সংকেত দেখা দিয়েছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অতীতে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবের কারণে বহু খামার বন্ধ হয়ে গেছে, লাখ লাখ মুরগি নিধন করা হয়েছে এবং অসংখ্য খামারি তাদের পেশা হারিয়েছেন। এবারও যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে পোল্ট্রি শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেছেন, সরকার বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত রয়েছে। খামারিদের সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, এবারের পরিস্থিতি আগের মতো নয়, তাই দ্রুতই এটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, যশোরের ওই খামারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ফ্লু যাতে অন্যত্র না ছড়ায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, মার্চের শুরুতে বার্ড ফ্লু শনাক্তের খবর পাওয়ার পরই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যশোরের খামারটি পরিদর্শন করেছেন এবং ফ্লুর উৎস ও বিস্তার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, এই ফ্লু যাতে আর না ছড়ায়, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছিল। তখন প্রায় ৩৭০টি খামার বন্ধ হয়ে যায় এবং ১০ লাখের বেশি মুরগি মেরে ফেলা হয়। ২০০৮ সালে মানুষের দেহেও বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছিল। ২০১৩ ও ২০১৭ সালেও বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, কিন্তু ২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম এটি ফিরে এসেছে। পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা আশঙ্কা করছেন, যদি এই প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করে, তাহলে আগের মতোই বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে খামারিদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে নিশ্চিন্তে হাঁস-মুরগি ও ডিম খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে মাংস ও ডিম রান্না করলে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি নেই। তবে খামারিদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
যশোরে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ার পর প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। খামারটি কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং আশেপাশের এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ফ্লু যাতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে না ছড়ায়, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলকে এই সংকট মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।