বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে শিক্ষার্থী–শ্রমিক সংঘর্ষের জেরে বন্ধ রয়েছে সকল আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল। গতকাল শনিবার ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাফভাড়া নিয়ে বিরোধের পর এই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবি, সংঘর্ষে প্রায় দুই শত বাস ভাঙচুর করা হয়েছে এবং দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন।
অন্যদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত বছর ১৮ আগস্ট মালিক সমিতির একটি অফিস আদেশে সরকারি ছুটির দিনসহ সর্বদা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফভাড়া নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও হিজলা থেকে ছেড়ে আসা জোহান পরিবহনের এক সুপারভাইজার তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে শ্রমিকরা তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আরও শিক্ষার্থী বিক্ষোভে জড়ো হলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ২৫ শিক্ষার্থী আহত হন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
শ্রমিকদের বক্তব্য ভিন্ন। তারা জানান, হিজলা থেকে ছেড়ে আসা জোহান পরিবহনের চালক হিরণ নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছানোর পর আগেই সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তাকে মারধর করে। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী টার্মিনালের আশপাশে জড়ো হয়ে বাস ভাঙচুর শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে শতাধিক বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি নূর পরিবহনসহ দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে গতকালের ঘটনার জেরে রোববার সকাল থেকেই বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব বাস চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে বাস বন্ধের নির্দেশনা কার পক্ষ থেকে এসেছে—মালিক সমিতি নাকি শ্রমিক সংগঠন—তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি।
শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখব। আমাদের যে গাড়িগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে পরবর্তীতে যেন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এরপর গাড়ি চলাচল শুরু হবে।
নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, গতকালের নৈরাজ্যে দুইশ বাস সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিক পরিবহন কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়েছে। এত বড় ঘটনা ৪০ বছরে কখনও ঘটেনি। এমনকি মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেয়া শ্রমিকদেরকে মারধর করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন সুষ্ঠু বিচার না দেওয়া পর্যন্ত গাড়ি রাস্তায় নামবে না। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে একটি সূত্র জানায়, নথুল্লাবাদের ঘটনা কেন্দ্র করে একাত্মতা প্রকাশ করে রূপাতলীতেও পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কিন্তু রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সভাপতি জিয়াউদ্দিন সিকদার এই সম্ভাবনা নাকচ করে বলেন, নথুল্লাবাদের ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই; তাই রূপাতলী থেকে বাস চলাচলে বাধা তৈরি হবে না।
জানা গেছে, মাত্র ৩০ টাকা ভাড়াকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই বিরোধ এখন বরিশালের পরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি অচল করে দিয়েছে। শিক্ষার্থী ও শ্রমিক উভয়পক্ষই নিজেদের ওপর হামলার অভিযোগ করছে। প্রশাসন এখনও সমাধানের কোনও উদ্যোগ ঘোষণা না করায় সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
বরিশাল মেট্রােপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম বলেন, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এখনও কোনও পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং সহিংসতা এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।