প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৫১
ঝিনাইদহের শৈলকপুা উপজেলার দেবতলা গ্রামে এক যুবককে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে তার ঘরবাড়ি ভাংচুর এবং পরিবারসহ গ্রামছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রিপন কাজী অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ২৮ জুন তাঁর গ্রামের রবিউল কাজীর বড় মেয়ে বগুড়ার শিহাব নামে এক যুবকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
গ্রামের লোকজন শিহাবের পরিচয় জানার জন্য মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় বাড়িতে যান। শিহাব প্রথমে সেনাবাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেয়, পরে জানায় যে সে মার্কেটিংয়ে কাজ করে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে গ্রামের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে যুবককে বিয়ে পড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এ ঘটনায় রিপন কাজী শিহাবকে থাপ্পড় মারেন, যা পূর্ব শত্রুতির সূত্রপাত হিসেবে বিবেচিত হয়।
এরপর ২০২৫ সালের ৩ মার্চ রবিউল কাজীর ১১ বছর বয়সী মেয়ের নাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা সাজানো হয়। ঘটনাটি দ্রুত গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। অভিযুক্ত পরিবারের অভিযোগ, রিপন কাজীর বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে এবং তিনি, তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে পথে বসেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অমিত কুমার ঘোষ ২৫ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেন, যাতে বলা হয় মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ডাক্তারী পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে চিকিৎসক ডাঃ সুলতানা মেফতাহুল জান্নাত আদালতে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় পরিবারটি নিজেদের ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন।
অভিযোগের অন্য পক্ষ রবিউল কাজী বলছেন, ধর্ষণ মামলাটি মিথ্যা নয় এবং ঘটনাটি সত্য। তিনি দাবি করেন, ঘটনার ১১ দিনের পর মামলা এবং ১২ দিনের পর ডাক্তারী পরীক্ষা হওয়ায় রিপোর্ট পক্ষে আসে নি। রবিউল কাজী আরও বলেন, প্রয়োজন হলে ডিএনএ পরীক্ষা করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, মিথ্যা মামলা ও ঘরবাড়ি ভাংচুরের ঘটনা এলাকায় সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। রিপন কাজীর পরিবার এখনও নিরাপদভাবে বাড়িতে ফেরেনি। তারা প্রশাসনের ন্যায্য পদক্ষেপ আশা করছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে মামলার আসামিপক্ষ থেকে হত্যার হুমকিও পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এ ধরনের ঘটনার তদন্তে প্রশাসনের স্বচ্ছতা জরুরি। তারা আশা করছেন, রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিবারকে নিরাপত্তা প্রদান করবেন এবং ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করবেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকায় সামাজিক সচেতনতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনসহ স্থানীয় সমাজ নেতারা পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করছেন, যাতে পরিবারটি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করতে পারে।