প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৪২
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে চাষি আব্দুল মান্নান অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। মাধবপুর ইউনিয়নের শুকুর উল্লার গ্রামের এই কৃষক মালচিং চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে তার ১২ বিঘা জমিতে টমেটোর উৎপাদন শুরু করেন। এ পদ্ধতিতে তার খরচ প্রায় ১৪ লাখ টাকা হলেও আবাদ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকার মুনাফা আশা করছেন। প্রতিদিন তিনি দুই থেকে তিন মণ টমেটো সংগ্রহ করছেন এবং বাজারে খুচরা দরে ১৩০-১৬০ এবং পাইকারি দরে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি করছেন।
টমেটো সাধারণত শীতকালীন ফসল হলেও, আব্দুল মান্নান মালচিং পদ্ধতি এবং আগাম জাতের চারা ব্যবহার করে গ্রীষ্মকালীন চাষে সফল হয়েছেন। মালচিং পদ্ধতিতে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, আগাছা রোধ, অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন কমানো এবং উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসল দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ভালো থাকে এবং ঝুঁকিও কমে। চাষি জানান, চারার অংশগ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী মূল এবং ফল উৎপাদনকারী অংশ একত্রিত করা হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফলন বাড়ায়।
এ পদ্ধতিতে ফুল-ফল এবং চারার ক্ষতি রোধ করা যায়, সেচের অতিরিক্ত পানি জমে জমি বিনষ্ট হয় না এবং শ্রম খরচও কম হয়। এর ফলে কৃষকরা স্বাবলম্বি হয়ে উঠছেন। আব্দুল মান্নানের সফলতা এলাকায় অন্যান্য কৃষকদের উৎসাহিত করেছে। কমলগঞ্জে আরও ৬-৭ জন কৃষক প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমি রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকে, পানি এবং সার সাশ্রয়ী হয় এবং ফলন বেশি হয়। এছাড়া, আধুনিক স্কাইনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ফুল, ফল এবং চারা রোদ-বৃষ্টি, পোকা ও পাখি থেকে রক্ষা করা যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় জানান, টমেটো চাষে মালচিং পদ্ধতি এবং গ্রাফটিং চারার ব্যবহার চাষিদের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার ৬০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের টমেটো উৎপাদন হচ্ছে এবং চাষিরা স্বাবলম্বি হয়ে উঠছেন। আধুনিক চাষাবাদে কৃষকরা ঝুঁকি কমিয়ে লাভবান হচ্ছে এবং কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ আব্দুল মান্নান ও অন্যান্য চাষিদের জন্য নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। আগাম জাতের টমেটো চাষে এলাকায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে এবং তারা নিজস্বভাবে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হচ্ছেন। এই পদ্ধতি কৃষির লাভজনকতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।