পার্বত্য খাগড়াছড়ির সীমান্তঘেঁষা উপজেলা পানছড়িতে একসাথে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দাঁশায় উৎসব। উৎসবের আবহে মেতে উঠেছে গোটা এলাকা।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) মহাপঞ্চমী পূজার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় ৬ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের। আগামী ২ অক্টোবর দশমী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন শেষে দেবীকে বিদায় জানাবে হিন্দু সম্প্রদায়। এদিকে একই সময়ে শুরু হয়েছে সাঁওতালদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব দাঁশায়।
প্রতি বছরের মতো এবারও পানছড়ির ১০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজার নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও ৩ বিজিবি লোগাং জোনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ, আনসার বাহিনী ও বিজিবির নিয়মিত টহলের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি এবং ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা নাসরিন জানান, “সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব পালন করতে পারেন, সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।”
৩ বিজিবি লোগাং জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম, পিপিএম (সেবা) বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পূজা মণ্ডপগুলোতে টহল ও ড্রোন ক্যামেরা নজরদারি অব্যাহত থাকবে।”
অন্যদিকে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ দাঁশায় উৎসবে যোগ দিয়েছেন অনন্য উচ্ছ্বাসে। শুকনো লাউয়ের খোল ও বাঁশ দিয়ে তৈরি বাদ্যযন্ত্র ‘ভুয়ং’-এর তালে, মাথায় ময়ূরের পালক, হাতে অলঙ্কার আর ধুতি-পাঞ্জাবি পরে সাঁওতাল যুবকেরা নেচে বেড়াচ্ছেন পাড়া থেকে পাড়ায়, মণ্ডপ থেকে মণ্ডপে।
সাঁওতাল স্টুডেন্ট ফোরামের সভাপতি আকাশ সাঁওতাল মুর্মো বলেন, “আমরা প্রকৃতির শক্তিকে দুর্গা রূপে আহ্বান জানাই। আমাদের কাছে দুর্গা মানে খরারোধী বাতাস, আর লক্ষ্মী-সরস্বতী মানে ঘূর্ণিঝড়। দাঁশায় আসলে প্রকৃতি পূজারই প্রতিচ্ছবি।”
লোককথা অনুযায়ী, সাঁওতালরা মহিষাসুরকে শ্রদ্ধা করে। তাদের বিশ্বাস—দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। তাই দাঁশায় নৃত্যগীতের মাধ্যমে মহিষাসুরকেই আরাধ্য করে তাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যান।
একই সময়ে দুর্গোৎসব আর দাঁশায় উৎসবকে ঘিরে পানছড়িতে তৈরি হয়েছে অনন্য এক মিলনমেলা। হিন্দু ধর্মালম্বীরা যেমন দেবীর আরাধনায় মগ্ন, তেমনি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ দাঁশায় গানে-নৃত্যে মাতোয়ারা।
উৎসবের রঙে রাঙানো এ আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয় মানুষ বলছেন—“এই পাহাড়ে দুই সংস্কৃতির এমন সমান্তরাল উৎসব প্রকৃতপক্ষে সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”