প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১৫:২২
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তিনি জানান, দুর্ঘটনার সময় পাইলট প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন বিমানটিকে খালি জায়গায় নামানোর, তবে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, পাইলটের ইচ্ছা ছিল জনবসতিহীন এলাকায় জরুরি অবতরণ করার, কিন্তু পরিস্থিতি এত দ্রুত খারাপ হয় যে তিনি নিজের জীবন বাঁচানোর সুযোগও পাননি। বিমানের ককপিট থেকে বের হতে দেরি হওয়ায় তাঁর মৃত্যু ঘটে। আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুর্ঘটনার পর থেকেই নানা ধরনের তথ্য ও গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এ প্রসঙ্গে বিমান বাহিনী প্রধান দেশবাসীকে অনুরোধ করে বলেন, কোনো ভিত্তিহীন তথ্য বা গুজবে কান না দিতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী বাহিনী। এমন একটি দুর্ঘটনা দিয়ে এই বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহত ও নিহতদের পরিচয় এবং অবস্থা সম্পর্কে তথ্য আইএসপিআরের মাধ্যমে নিয়মিত জানানো হচ্ছে। বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় কোনো তথ্য গোপন করার সুযোগ নেই।
বিমানটি ছিল একটি সিঙ্গেল ইঞ্জিন প্রশিক্ষণ বিমান। এ সম্পর্কে এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, “বিমান সহজে পুরোনো হয় না, যতক্ষণ না রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করা হয়। আমরা প্রতিটি যন্ত্রাংশ তার নির্ধারিত সময় পর্যন্তই ব্যবহার করি।” তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি পুরনো হলেও যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা যতটুকু সময়ের জন্য ঠিক আছে, ততদিনই তা ব্যবহৃত হয়।
তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “তদন্তের ফলাফল আসার আগেই কেউ দোষারোপে না জড়ান। দুর্ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে, তবে আমাদের দায়িত্ব হলো তা থেকে শিক্ষা নেওয়া।” নিহতদের পরিবারকে যথাযথ সহায়তা দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর আশপাশে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। এলাকার মানুষ দ্রুত ছুটে এসে উদ্ধার কাজে সহায়তা করে।
ঘটনার পর পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা যৌথভাবে উদ্ধার ও তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জাতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে।