প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩৫
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফের বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে যাওয়ায় প্রচণ্ড স্রোতে পানি ঢুকে পড়ছে জনপদে, তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, সড়ক ও ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, উদ্ধার কাজের জন্য ইতিমধ্যে স্পিডবোটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত তিন উপজেলায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বছরের মতো এবারও তাদের জীবন বিষাদে পরিণত হয়েছে। ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ সতর এলাকার বাসিন্দা রবিউল হাসান বলেন, পানি ঢুকে ঘরবাড়ি, আসবাব, খাদ্যসামগ্রী সবকিছু ডুবে গেছে। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, পানির কারণে যান চলাচল বন্ধ, বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কোনো ত্রাণসামগ্রী হাতে পাননি তারা। তিনি অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ফেনী আবহাওয়া অফিস জানায়, জেলায় গত চারদিন ধরে অব্যাহতভাবে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দুপুর ১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভাঙনের স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমে গেলে বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার চারটি উপজেলা এবং সদরের বিভিন্ন এলাকায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে এবং ছয় উপজেলায় ত্রাণ সহায়তার জন্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অবিরাম বৃষ্টিপাতে ও নদীর বাঁধ ভাঙনে দুর্ভোগে পড়া মানুষদের দুর্দশা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে চলমান অভিযান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কতটা কার্যকর হয়, তা নির্ভর করছে প্রাকৃতিক অবস্থার উপর।