প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ২০:১৬
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে নানা আধুনিক পরীক্ষানিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, তবে সেগুলো যথাযথ ব্যবহার না করে রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে যন্ত্রপাতির ব্যবহার কম হওয়ার পেছনে টেকনিশিয়ানের অভাব এবং জনবল সংকটকে কারণ হিসেবে বলা হলেও চিকিৎসকদের যোগসাজশে এই বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে অপারেটর পদ শূন্য থাকায় এক্সরে পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি বিভাগের জনবলের ঘাটতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে অপারেশন থিয়েটার কার্যক্রম বন্ধ। এর বাইরে অন্যান্য সেবা সচল থাকলেও জরুরি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রোগীদের প্রায় ৯৮ শতাংশকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, চিকিৎসকেরা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে রোগী পাঠানোর একটি অচেনা বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাসুদুর রহমান ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফারুক হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা নিজেদের পছন্দমতো রোগীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষার জন্য পাঠান।
অন্যদিকে, মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এ কে এম আবু সাইদ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে নীরবতা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাঃ ফারুক হোসেন তার নিজস্ব চেম্বারসহ রোগীদের মোল্লা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান, যেখানে তার পরিচিত কর্মীরা রোগীদের গ্রহণ করেন। যদিও তিনি দাবি করেন, রোগীদের কোনো নির্দিষ্ট ক্লিনিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন না এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব ধরনের পরীক্ষা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, অনেক সময় রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়, যা রোগীর জন্য অতিরিক্ত ব্যয়। তবে এর পেছনে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির স্বার্থ জড়িত বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি অনেকটাই অব্যবহৃত ও অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। এতে সরকারি বিনিয়োগের অপচয় হচ্ছে এবং সাধারণ রোগীরা সরকারি সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সাধারণ রোগীরা জানান, সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করার সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত খরচে বেসরকারি ক্লিনিকে যাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, সরকারি হাসপাতালে যথাযথ সেবা নিশ্চিত না হলে এসব অনিয়ম বন্ধ করা জরুরি।
এই বাণিজ্যের কারণে রোগীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য খাতে আস্থা কমছে। কর্তৃপক্ষের দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে স্থানীয় জনগণের মধ্যে।