প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১৭:৯
ঈদুল আযহা সামনে রেখে সারাদেশে যেখানে চাকু-ছুরি তৈরিতে কামারপাড়াগুলো জমজমাট থাকে, সেখানে জয়পুরহাটের পাঁচবিবির কামারপাড়ায় এবার সেই চিরচেনা টুংটাং শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। কামারদের দোকানে নেই আগের মতো ভিড়, নেই ব্যস্ততা, বরং চাহিদাহীন এক নিস্তব্ধতা যেন ঘিরে ধরেছে পুরো এলাকা।
পাঁচবিবি উপজেলার ফিচকাঘাট বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ পুরনো চাকু-ছুরি ধার করিয়ে নিচ্ছেন। নতুন কিছু কেনার আগ্রহ কম। অনেকেই বলছেন, এবার লোহার ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বাঁচাতে পুরনো জিনিসেই কোরবানি সারবেন।
স্থানীয় কামার সন্তোষ কর্মকার জানান, গত বছরের তুলনায় এবারে কাজ অনেক কম। আগে যেভাবে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো, এবারে সেসব আর নেই। কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেশি পড়ছে, আর মানুষজন নতুন কিছু কিনতেও চাইছে না।
চাকু ধার করাতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে পুরনো ছুরি-বটি আছে, সেগুলোই ধার করিয়ে নিচ্ছি। দাম বেশি হওয়ায় নতুন কিছু কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তার মতো অনেকেই একইভাবে খরচ কমানোর পথে হাঁটছেন।
কামার সন্তোষ কর্মকার আরও জানান, ঈদের এই মৌসুমে যেটুকু আয় হয়, তা দিয়েই সারা বছর চলতে হয়। কিন্তু এবারে সেই আয়ের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তার নাতি সঞ্জয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে আছে, কারণ এই আয়ে পরিবার চালানোই কষ্টকর।
ছোট্ট সঞ্জয় জানায়, তার খুব ইচ্ছে স্কুলে যাওয়ার। কিন্তু নানার আয় দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে দোকানে এসে নানাকে সাহায্য করে কাজ শিখছে, তবুও মনটা পড়ালেখাতেই পড়ে থাকে।
অন্যদিকে দোকানদার রাসেল মণ্ডল বলেন, এখনো পর্যন্ত একটা ছুরিও বিক্রি করতে পারেননি। মানুষ ধান কাটায় ব্যস্ত, ঈদের কেনাকাটায় আগ্রহ কম। শুক্রবার হাটে কিছু বিক্রি হতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।
চাহিদা কম, দাম বেশি, আর আয়ের অনিশ্চয়তায় কামারপাড়ার জীবনে ঈদের আগমনী বার্তা এবারে যেন নিস্তব্ধতা ও দুশ্চিন্তায় মোড়ানো।