দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে সাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মা ও নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মেয়েকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ব্যক্তি ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতনের শিকার পরিবারটি। ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, উপজেলার খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে গত শনিবার ফারুক হোসেনের বাড়ি থেকে একটি সাইকেল চুরি হয়। পরদিন রোববার প্রতিবেশী সিদ্দিক হোসেনের বাড়ি থেকে সাইকেলটি উদ্ধার করা হয় এবং স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়। কিন্তু পরে ফারুকের স্ত্রী এবং সিদ্দিকের স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে উত্তেজনা বাড়ে। অভিযোগ রয়েছে, এ সময় সিদ্দিক ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুকের স্ত্রীকে আঘাত করেন। ফারুক এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় বিকেলে ফারুক, তার শালা এবং আরও কয়েকজন সিদ্দিকের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী ও মেয়েকে জোর করে বাড়ি থেকে টেনে এনে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করে। ঘটনার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র নিন্দার সৃষ্টি হয়।
সিদ্দিক হোসেনের মা জরিনা বেগম বলেন, “আমার ছেলে যদি চুরি করে থাকে তার শাস্তি হোক, কিন্তু তার স্ত্রী ও মেয়ের কোনো দোষ নেই। তাদের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করা অমানবিক কাজ।”
প্রতিবেশী সূর্য বেগম বলেন, “চুরি হওয়া সাইকেল তো ফেরত এসেছে, এরপরও নিরপরাধ মা-মেয়েকে এভাবে নির্যাতন করা অনৈতিক।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ফারুক হোসেনের স্ত্রী এলেন বেগম বলেন, “আমাকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। পরে আমার ভাই এসে ওই দুইজনকে আটক করে খুঁটিতে বেঁধে রাখে যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে।”
স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, “ঘটনা যাই হোক না কেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি। দেশে আইন আছে, তার ভিত্তিতেই বিচার হওয়া উচিত।”
হাকিমপুর থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, “উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং সাধারণ মানুষ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনায় যেন বিচারবহির্ভূত শাস্তির সংস্কৃতি না গড়ে ওঠে, সে বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।