দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের সেবার মান নিয়ে চাঞ্চল্যকর অনিয়মের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের একটি দল বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন অভিযান চালিয়ে এসব অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
অভিযান শেষে দুদকের দিনাজপুর কার্যালয়ের সহকারী উপ-পরিচালক খাইরুল আলম জানান, “বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আজকের অভিযানে দেখা গেছে, রোগীদের খাবারে নিয়মের তোয়াক্কা না করে মাংসের পরিবর্তে মাছ সরবরাহ করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিনামূল্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থায়ও অনিয়ম রয়েছে। ওষুধ বিতরণের রেজিস্টার দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ করা হয়নি। রোগীদের টেস্ট করার জন্য হাসপাতালে কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি থাকলেও তা ব্যবহৃত হচ্ছে না।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালের দুইজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) এর বিরুদ্ধে স্বার্থসংঘাতের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের একজন ইয়াছিন আলীর স্ত্রীর নামে শহরের ‘নাজমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এবং অন্যজন শাহ আল এমরানের বাবার নামে ‘রাজু ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিক’ পরিচালিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই দুই কর্মকর্তা হাসপাতালের রোগীদের বাইরে ক্লিনিকে টেস্ট করতে প্ররোচিত করেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক ইসমাঈল হোসেন বলেন, “এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, কিন্তু টেস্টের হিসেবের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন মাত্র পাঁচ-ছয়টি টেস্ট দেখানো হচ্ছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি রোগীদের দালালের মাধ্যমে বাইরে ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে দুই ল্যাব সহকারীর বদলি সংক্রান্ত প্রস্তাব জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। এছাড়া, খাবার সরবরাহের ঠিকাদার ও তদারকি কর্মকর্তাকে শো-কজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহারিয়ার পারভেজ এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, হাসপাতালের কিছু কর্মচারী এবং ক্লিনিক মালিকদের গোপন যোগসাজশের কারণে রোগীরা বিনা কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দুদকের এই পদক্ষেপে জনমনে আশার সঞ্চার হলেও সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।