প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০:৩৯
বরিশালের হিজলা উপজেলায় অননুমোদিত কারখানায় প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এতে করে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে, অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য কারখানা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা। একাধিকবার স্থানীয়দের বাধার কারণে কারখানা মালিক প্লাস্টিক পোড়ানো বন্ধের কথা বললেও বাস্তবে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরেজমিন সূত্রে জানা গেছে, হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের পত্তনীভাঙ্গা ঘনবসতি এলাকায় ইফরাস খান ট্রেডার্স নামক একটি কারখানায় নির্বিঘেœ পানির বোতল, প্লাস্টিকের খেলনা কাটিং করে বাজারজাত করছে। এলাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বাতিল পানির বোতলসহ প্লাস্টিক বজ্য সংগ্রহকারীদের নিকট থেকে কিনে কাটিং করা হয় এ কারখানায়। এই কারখানায় পোড়ানো হচ্ছে পরিত্যক্ত পলিথিন ও নানা ধরনের প্লাস্টিকের বর্জ্য। প্লাস্টিক পোড়ানোর সময় পোড়া গন্ধে ভরে ওঠে গোটা এলাকা। কারখানার পাশেই রয়েছে একটি বাজার এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে কয়েক হাজার লোকের বাস। বর্জ্য পোড়ানোয় এরই মধ্যে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। পূর্ব পত্তনীভাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ খাদিজা বেগম জানান, কিছুদিন ধরে প্লাস্টিকের বর্জ্য পোড়ানোর ধোয়া ও দূর্গন্ধের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে স্থানীয়দের গণস্বাক্ষরসহ মোঃ গনি মজুমদার স্থানীয় সকলের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের মতে, প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া বাতাসে মিশে তৈরি হয় কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস। যা ফুসফুস ও শরীরের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের সৃষ্টি করে থাকে। গবেষকেরা বলছেন, প্লাস্টিক কণা শরীরে প্রবেশ করার ফলে অ্যালার্জি, পাচনতন্ত্রের সমস্যা, ক্যানসার, অ্যাজমা, অটিজম, হরমোনজনিত সমস্যা, গর্ভপাতসহ নানান রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। কারখানায় এসব বর্জ্য পোড়ালে তা থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করে ব্রংকিয়াল অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করে। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন হয় ক্ষতিকর ভারী ধাতু যা পরিবেশ দূষণ সহ মানবদেহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগের কথা স্বীকার করে কারখানার মালিক মোঃ গিয়াস উদ্দিন খান জানান, ভবিষ্যতে এখানে (কারখানায়) প্লাস্টিকের বর্জ্য পোড়ানো হবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র তার কাছে নেই বলে ও তিনি জানান।
বরিশালের পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম জানান, এ ধরনের প্লাস্টিকের কারখানা উপজেলায় আছে তা আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তারেক হাওলাদার জানান, ঘনবসতি এলাকায় প্লাস্টিক কাটিংয়ের কাজ করলে তা অবশ্যই জনস্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি। তবে এ ধরনের প্লাস্টিক কারখানা সম্পর্কে আমার জানা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতীত ব্যবসা করলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।