প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০:৩
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালে ২৪ ঘন্টায় চলতি মৌসুমের রেকর্ড ৩৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে বরিশাল নগরীর সব সড়ক পানির নিচে চলে গেছে। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করছে না। অনেক নিচু এলাকার বসতবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার বলেন, ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৩৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এর প্রভাবে চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ-আট ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বরিশাল নগরীর সদর রোড, আগরপুর রোড, গোরস্থান রোড, কালুশাহ সড়ক, বটতলা, হাতেম আলী চৌমাথা, বাংলাবাজার, কলেজ অ্যাভিনিউ, কলেজ রো, ফকিরবাড়ি, কালীবাড়ি, রাজাবাহাদুর, ব্রাউন কম্পাউন্ড, পলিটেকনিক সড়ক, বাংলাবাজার, আমানতগঞ্জ, পলাশপুরসহ নগরের সব সড়কই পানিতে নিমজ্জিত। এ ছাড়া, চৌমাথা, আলী চৌমাথা, রূপাতলী হাউজিং, দপদপিয়া, পলাশপুরসহ নগরের পশ্চিমাংশের বিশাল এলাকায় বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষজনের ঘর থেকে বেরোনোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ভারি বর্ষণের পাশাপাশি নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাহফুজুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় ৩৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশাল। যা চলতি মৌসুমের রেকর্ড। একবারে ২৪ ঘন্টায় এতো বৃষ্টিপাত আর হয়নি। তিনি বলেন, আজ দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ভোর রাতের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে সার্বিক আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্য জানানো নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিসকে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর ফলে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্মাঞ্চালে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছে। কিছু কিছু এলাকার বসত ঘরেও ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. মাছুম জানিয়েছেন, বরিশালসহ ৭টি জেলা এবং উপজেলা সংলগ্ন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে ‘বরিশাল কীর্তনখোলা, ভোলা সদরের তেতুলিয়া, দৌলতখানের সুরমা-মেঘনা, তজুমদ্দিনের সুরমা-মেঘনা, ঝালকাঠির বিষখালী, বরগুনার বিষখালী ও পাথরঘাটার বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিটি নদীর পানি বিপৎসীমার সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌ চলাচল শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ নিরপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় সকাল ৯টা থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে স্বাভাবিক নিয়মে লঞ্চ চলাচল করছে। আর রাতে ঢাকা-বরিশাল রুটে স্বাভাবিক নিয়মে লঞ্চ চলাচল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।