প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২২, ২৩:৪৮
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণের জনপদের পরিবহন সেক্টরে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। নতুন নতুন আধুনিক বাস যুক্ত হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা রুটে। এতে প্রায় কোনঠাসা হয়ে পড়ছে এক সময়ে দাপুটে রুট বরিশাল-মাওয়ায় চলাচলকৃত মাইক্রোবাসগুলো। তবে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে মাইক্রোবাস মালিকরা। নতুন করে এবার তারা বরিশাল ঢাকা সরাসরি নিয়মিত সার্ভিসে যুক্ত হচ্ছে অর্ধশত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাস। তবে মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু হলে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার আশংকা করছেন অনেকেই। এদিকে মাইক্রোবাস সার্ভিসের সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, যাত্রীসেবায় অন্য যেকোনো পরিবহনের তুলনায় বেশি জনপ্রিয়তা পাবে এই পরিবহন।
সূত্রমতে, বরিশাল-ঢাকা রুটে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগের অপর নাম ছিল মাওয়া ফেরী। সময় বাচাতে এবং কিছুটা আরামে যাতায়াতের জন্য তাই যাত্রীদের প্রথম পছন্দ ছিল মাইক্রোবাস সার্ভিস। ফলে মাইক্রোবাসের সংখ্যাও বাড়তে থাকে এ রুটে। জানা যায়, প্রায় দেড় শতাধিক মাইক্রোবাস চালক বরিশাল-মাওয়া রুটে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মাইক্রোবাস ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করে। অনেকটা যাত্রী শূন্য হয়ে পড়ে মাইক্রোবাস সার্ভিসে। তবে অন্যান্য পরিবহনের সাথে তাল মিলিয়ে তারাও ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন। সেতু চালু হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে তোড়জোড় চলছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো নতুন নতুন মাইক্রোবাস যুক্ত হয়েছে এ সেবায়। মূলত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ছোট এই যানবাহনের সেবা বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। সরাসরি ঢাকার সাথে মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু হওয়ায় বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল যাতায়াতে বাসের চেয়ে কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় কম লাগবে যাত্রীদের।
মাইক্রোবাসচালক বাচ্চু বলেন, আগে ফেরির কারণে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত আমরা যেতে পারতাম। এখন ফেরির বিড়ম্বনা না থাকায় যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া যাবে।
আরেক চালক কালাম বলেন, আগে আড়াই ঘণ্টায় কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত যেতাম। ভাড়া নিতাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। যাত্রীও ছিল প্রচুর। সেতু চালু হলে যাত্রীরা দ্রুত গন্তব্যে যেতে লঞ্চ ও বাসের চেয়ে মাইক্রোবাস সার্ভিসকে বেছে নেবেন। এ জন্য বলতে হয় পদ্মা সেতু আমাদের সুদিন ফিরিয়ে দিচ্ছে।
লাইনম্যান আবুল হোসেন বলেন, অনেক লোক আছে, তাদের প্রাইভেট কার কেনার ক্ষমতা নেই। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে তাদের দ্রুত যেতে হয়। কয়েক বছর ধরে আমি লাইনম্যানের দায়িত্বে আছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যদি ভালো মানের গাড়ি রুটে থাকে, তাহলে বাস-লঞ্চের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হবে মাইক্রোবাস সার্ভিস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরাতন মাইক্রোবাস বাদ দিয়ে নতুন মাইক্রোবাস নামানোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই নতুন মাইক্রোবাস সড়কে নামাতে তারা এখন ব্যাংকগুলোতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাইক্রোবাস চালক জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হলেও জীবিকার তাগিদে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকার সায়েদাবাদে মাইক্রোবাসের কাউন্টার নেয়া হয়েছে।
বরিশাল নথুল্লাবাদ মাইক্রোবাস সার্ভিসের পরিচালক গোলাম কবির বলেন, বরিশালের মালিকানাধীন ২০ থেকে ২২টি আর ঢাকার মালিকানাধীন মিলিয়ে অর্ধশত মাইক্রোবাস মালিক ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাত্রীসেবা দিতে নিয়মিত পরিবহন চালু রাখব। আমাদের মাইক্রোবাস সার্ভিসের সব গাড়ি হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। এখন পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। তিনি বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে টিকে থাকার লড়াইয়ে মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে মাইক্রোবাস চালকদের সচেতন হতে হবে। নতুবা সড়কে দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের আরো তৎপর হতে হবে বলেন তিনি।