প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ৪:২৮
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদামে রাতের অন্ধকারে খাবার অযোগ্য পচা চাল ঢোকানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও )। ততক্ষণে গুদামের ভেতরে ঢোকানো হয় ৩০ কেজি ওজনের ১৭৩ বস্তা চাল। গুদামের বাইরে ঢোকানোর অপেক্ষায় ছিল আরও ৭৭ বস্তা চাল।
পরীক্ষা করে দেখা যায়, চালগুলো খাবার অযোগ্য-পচা। তাৎক্ষণিক সবার সামনে গুদামে ঢোকানো ১৭৩ বস্তা চাল এবং আগে থেকে রক্ষিত ১৯ মেট্রিকটন চালসহ ১ নম্বর গুদাম সিলগালা করেন ইউএনও। আর বাইরে থাকা ৭৭ বস্তা চাল পাহারায় রাখলেন সশস্ত্র আনসার। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে ৩ সদস্যের বিভাগীয় তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে যান। তারা সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করে জেলা সদর থেকে চাল কর্মসূচির মাধ্যমে পাঠানো চালের নমুনার সাথে ঢোকানো চালের কোনো মিল খুঁজে পাননি।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক, রৌমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী আলাউদ্দিন বসুনিয়া ও জেলা সদরের খাদ্য পরিদর্শক পারভেজ হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, ভিজিডিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণের জন্য জেলা সদরের খাদ্য গুদাম থেকে ৩০০ মেট্রিকটন চাল রৌমারী উপজেলা খাদ্য গুদামে পাঠানোর চলাচল কর্মসূচি দেওয়া হয়। এই চলাচল কর্মসূচির আওতায় জেলা সদর থেকে দুদিন আগে ১৫৪ মেট্রিকটন চাল রৌমারীতে পাঠানোর জন্য ছাড় করা হয়। কিন্তু সে চাল বদলানোর উদ্দেশে রাতের অন্ধকারে স্থানীয় মিলারের কাছ থেকে ওই খাবার অযোগ্য চাল নিয়ে গুদামে ঢোকানো হচ্ছিল।
তদন্ত কমিটির সদস্য আরও জানান, বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত তারা জেলা সদরে ফিরে আসতে পারেননি। তারা তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে দাখিল করবেন।
রৌমারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোর্শেদ আলমের সাথে বুধবার সন্ধ্যায় ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, গুদামে ঢোকানো চাল আর জেলা সদর থেকে আনা চালের নমুনার মিল আছে। চালগুলো পুরনো হওয়ায় পচা লাগছে।
তিনি আরও দাবি করেন, জেলা সদর থেকে পাঠানো ১৫৪ মেট্রিকটনের মধ্যে ৫৪ মেট্রিকটন চাল দেরিতে আসায় রাতে ঢোকানো হচ্ছিল। অবশিষ্ট ১০০ মেট্রিকটন চাল পথিমধ্যে নৌকায় আছে। তিনি ৫৪ মেট্রিকটন চাল পাওয়ার চালান দেখিয়েছেন বলে জানান।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল ইমরান জানান, খাবার অযোগ্য চাল গুদামে ঢোকানোর খবর পেয়ে সাথে সাথে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছেন। এ জন্য গুদাম সিলগালা করে বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে অবহিত করেছেন।
তিনি অনুসন্ধানে জানতে পেরেছেন, উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী বাজারের আবুল নামের এক মিল মালিকের কাছ থেকে চালগুলো এনে গুদামে ঢোকানো হয়েছে। বুধবার খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তদন্ত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু বকরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।