প্রকাশ: ১ আগস্ট ২০২১, ১৮:৫
গণপরিবহন ছাড়লেও কাজে আসছে না পোশাক শ্রমিকদের। 'কঠোর লকডাউন' এর ভেতর আজ (০১ আগষ্ট) থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো খুলে দিয়েছে সরকার। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের পর কারখানার কাজ যোগ দিতে গতকাল (৩১ জুলাই) সকাল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলা-থানা থেকে ঢাকামূখী আসতে শুরু করেছে।
আজ রোববার সকালে কারখানা খোলার দিনও ঈদে বাড়ি ফেরা শ্রমিকদের ঢাকায় আসার সেই স্রোত সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে।
এদিকে গতকাল সারদিন দুর্ভোগে যাত্রা শেষে সন্ধ্যায় গণপরিবহন খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনো কাজে লাগেনি অসহায় শ্রমিকদের। এখনো তারা মাইক্রোবাস-ট্রাকে করেই কর্মস্থলে আসছেন৷
গাইবান্ধা থেকে আজ সকালে মাইক্রোবাস দিয়ে আশুলিয়ায় এসেছেন রহিমাও তার মেয়ে সনিয়া। তারা দুজনই আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সকালে মাইক্রোবাস থেকে নেমে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আরএস টাওয়ারের নিচে বসে আছেন তারা। সারা পথ এতো কষ্ট করে গাদাগাদি করে আসতে পারলেও এখন আর গাড়ি পাচ্ছেন না তারা।
বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার বিষয়ে কথা হয় মাদেজার সাথে। তিনি ইনিউজ ৭১কে বলেন, 'আমারা জানি আমাদের কারখানা ৫ আগষ্ট খোলা। সেই কারণে আমরা গাঁ ছেড়ে বসে ছিলাম। যে কারখানা তো পরেই খোলা সমস্যা নেই। হটাৎ করে গত শুক্রবার মোবাইলে মেসেজ দিছে ১ তারিখ কারখানা খোলা। পরে সেদিন রাতেই আসবো কিন্তু গাড়ি পাইনি।
তিনি বলেন, গতকাল রাতে আবার গাড়ি পেয়েছি তবে যে ভাড়া ৩০০ টাকা সে ভাড়া ২০০০ টাকা দিয়ে আসলাম। এসে কি হলো তারপরেও আমরা কারখানায় যেতে পারলাম না। আজ আমাদের দুই জনেরই এবসেন্ট।'
পাশে বসে থাকা আরেক নারী শ্রমিক খাদিজা তিনি আশুলিয়ার কাঠগড়ার চালার বাজার এলাকায় এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি ই নিউজ ৭১কে বলেন, 'যাওয়ার ব্যবস্থা তো সরকার ঠিক করে দিয়েছিলেন, আসার সময় এতো কষ্ট করালেন কেন। সরকার জানে না শ্রমিকরা দেশে চলে যাবে।
তারা বলেন, শ্রমিকদের পোলাপান আছে বাপ-মা আছে তাদের সাথে আমরা ঈদে করবে। আর যদি নাই যেতে দিতো তবে আগে থেকেই সেই ব্যবস্থায় নিতো। আসার ব্যবস্থা করে দিলো না কেউ। কত কষ্ট করে আসলাম এম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে তাও আবার আধা রাস্তায় নামায় দেয়। অফিস এবসেন্ট হয়ে গেলো।'
ঠাকুরগাঁও থেকে ট্রাকে এসেছেন ইসমাইল তিনি ই নিউজ ৭১কে বলেন, 'হটাৎ করে কারখানা খোলা, এটা কোনো কথা। আমারও তো মানুষ। তরিঘরি করে ট্রাক দিয়ে ডাবল ভাড়া দিয়ে আসলাম।'
এদিকে খোঁজ নিয়ে ও বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শ্রমিক কারখানায় উপস্থিত হতে পারেনি। গড়ে ধরলে ৬০ শতাংশ শ্রমিক কারখানায় এসেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, এখনো অনেক শ্রমিক রাস্তায় পরে আছে। কারখানা চালু হলেও শ্রমিকদের অনুপস্থিততে ঠিক ঠাক কাজ হচ্ছে না। হাঠৎ করে এভাবে সমন্বয়হীন সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা পরেছে চরম দূ্র্ভোগে।
তারা আর্থিক ও মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকেই চাকরি হারানোর আতঙ্কে যেভাবে পেরেছেন ঢাকায় এসেছেন। যারা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি তাদের সাথে এমন আচরণ করাটা আসলেই দুঃখজনক।
সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে সাভার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই এডমিন) আব্দুস সালাম বলেন, কাল সারাদিন কোনো গণপরিবহন সড়কে চলেনি। আজ সকাল থেকে কিছু কিছু পরিবহন চলছে। সড়কে কোথাও যানজট নেই। তবে বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে যাত্রীদের জটলা রয়েছে।