
পদ্মার পানিতে ডুবে গেছে চরের পাকা ধান,বাদাম: বিপাকে কৃষক

জিয়াউল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ২২:৪৭
শেয়ার করুনঃ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের হঠাৎ করে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে পাকা আউশ ধানসহ বহু কৃষি ফসল ডুবে গেছে।
এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন অসহায় কৃষকেরা। ট্রলার ভাড়া ও শ্রমিকের চড়া মজুরি যোগার করতে না পেরে অনেক কৃষকই উত্তাল পদ্মার ওপার গিয়ে ডুবে যাওয়া ফসল সংগ্রহ করতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় সরেজমিন আলাপকালে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক এ তথ্য জানান।
তারা জানান, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরবিশ্বনাথপুর,বেথুরী,ধোপাগাথী,উত্তর দৌলতদিয়া,বনভাবৈল,কুশাহাটা,বেতকা সহ বিভিন্ন চরে শতশত বিঘা জমিতে কৃষকরা এ ফসলের আবাদ করেন।
দৌলতদিয়া নতুন পাড়া এলাকার কৃষক লোকমান সরদার (৪৮) জানান, তিনি পদ্মার ওপার উত্তর ধোপাগাথী চরে ২ বিঘা বাদাম,১০ বিঘা আউশ ধান এবং ২২ বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করেছিলেন। এতে তার প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ব্যায় হয়েছে। এর বেশীরভাগ টাকা সুদে করে নেয়া।বাদাম এবং কিছু তিল তোলা সম্ভব হয়েছে। আউশ ধানও পেকে গেছে। এর মধ্যেই হঠাৎ পানি বেড়ে গিয়ে ক্ষেতে কোমর সমান পানি হয়ে গেছে। কামলা নিয়ে গিয়ে যতটা সম্ভব কাটার চেষ্টা করছি।কিন্তু তাতে মনে হয় শ্রমিকের বেতন ও ট্রলার ভাড়ার টাকাই উঠবে না।
মজিদ শেখের পাড়ার বিধবা রাবেয়া বেগম (৪০) জানালেন,তার নিজের কোন জমি নাই। বার্ষিক লিজ নিয়ে ৪ বিঘা জমিতে বাদাম ও আউশধানের আবাদ করেছিলাম। ৪ মন বাদাম তুলতে পেরেছিলাম। কিন্তু ধানগুলো ডুবে গেছে। আমার দুই ছেলে চরে গিয়ে পানির মধ্য হতে যতটা সম্ভব কেটে আনছে।এতে তাদের অনেক লোকসান হবে।

ফকির পাড়ার আক্কাস শেখ (৫৫) বলেন,চরে তার নিজের জমি নাই। বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে বাৎসরিক লিজ নিয়ে ৪০ বিঘা জমিতে তিনি তিল ও আউশধানের চাষ করেছিলেন। ফসলও মোটামুটি ভালো হয়েছিল। আশা ছিল ধার -দেনা শোধ করেও সারা বছর ঘরের ধানের ভাত খাব।কিন্ত সেটা আর হলো না।
বরকত সরদার পাড়ার সম্ভ্রান্ত কৃষক কোব্বাত সরদার জানান,বহু বছর পর চরে তাদের অনেক জমি জেগে উঠেছে।অনেক আশা করে ধান-দেনা নিয়ে এবার ৪৫ বিঘা আউশ ধান,১৫ বিঘা বাদাম ও ২৬ বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করেছিলেন। সাথে ১২ বিঘা জমিতে বাঙি ও ঝিঙের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু এবার প্রচন্ড খড়া ও হঠাৎ পানি বেড়ে ফসল ডুবে যাওয়ায় তার অনেক লোকসান হবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করেন, চরে কোন সময় কোন ফসল করলে বা কিভাবে চাষাবাদ করলে তারা লাভবান হবেন সে বিষয়ে তারা কৃষি বিভাগের কোন সহায়তাই পান না।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাকিবুল ইসলাম জানান,দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে ৩ জন করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার জায়গায় আছেন মাত্র ১ জন করে। অফিসেও লোকবলের সংকট রয়েছে।ফলে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে।চরের ডুবে যাওয়া ফসলের বিষয়ে তারা এখনো কোন খোঁজখবর নিতে পারেন নি। তবে দ্রুতই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রণোদনার জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে।
#ইনিউজ৭১/এনএইচএস/২০২১


