প্রকাশ: ৯ জুন ২০২১, ১৪:১৩
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানীতে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট। এখান দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হয়। যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়ায় ৭টি ফেরি ঘাট নির্মাণ করেছে কর্তৃপক্ষ। গত বছর প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ৭নম্বর ঘাট নির্মাণের পর থেকে বালু ব্যবসায়ীরা সড়কটি ব্যবহার করছে।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয় সূত্র জানাযায়, ২০১৯ সালে ১ ও ২নম্বর ঘাট নদী
ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী বছর সংস্কার করলেও ব্যবহৃত হচ্ছে না। বাকি ৪টি ঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। ৬নম্বর ঘাট লো-ওয়াটার লেভেল হওয়ায় শুষ্ক মৌসুম (সেপ্টেম্বর) থেকে বন্ধ রয়েছে।
গত বছর কর্তৃপক্ষ বাহির চর ছাত্তার মেম্বার পাড়া প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে সংযোগ সড়কসহ নতুন ৭নম্বর ঘাট নির্মাণ করে। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে সেটি চালু হয়। ঘাট নির্মাণের পর থেকে সংযোগ সড়ক দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বালু ব্যবসা করছেন।
ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায় চালক, যাত্রী এবং স্থানীয় জন সাধারণকে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১নম্বর ফেরি ঘাটের পন্টুনের সাথে বিআইডব্লিউটিসির
উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’ নোঙর করে রাখা। ওই ঘাটটিতে কোন ফেরি ভিড়তে পারে না।
২নম্বর ঘাটটি দুই বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে কার্গো থেকে সারসহ পন্য লোড আনলোডে ব্যবহার করছে। বিধায় এই ঘাটটিতেও কোন ফেরি ভিড়তে পারে না।
৭নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কের দুই পাশ জুড়ে প্রভাবশালীরা সড়কের জায়গা আটকে বালুর ব্যবসা করছে।
সড়কের অনেকটা জায়গা আটকে বিশাল বালুর স্তুপ করেছেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ২নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. কাসেম খানসহ কয়েকজন। কাসেম খান নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে বালু ট্রাকে লোড দিচ্ছেন। সংযোগ সড়কের দুই পাশ জুড়ে রয়েছে শতাধিক পরিবার।
দিন-রাত বালু লোড-আনলোড হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায় ব্যাহত হয়। বাতাসে বালু উড়ে পথচারীসহ ঘর-বাড়িতে প্রবেশ করে খাবার নষ্টসহ দৈনন্দিন জীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ঢাকার উত্তরা থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক চালক শামচুর রহমান যাচ্ছিলেন যশোর। ফেরি থেকে নামার পর বালুর চাতালের কাছে আসামাত্র বিপরিত দিক থেকে আরেকটি গাড়ি আসায় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।
চালক শামচুর রহমান ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, রাস্তা আটকে যদি বালুর ব্যবসা চলে তাহলে আমরা চলবো কিভাবে? বিপরিত দিকে ফেরিতে ওঠার জন্য লম্বা লাইনে থাকা যাত্রীবাহী বাসে বাতাসে বালু প্রবেশ করলে যাত্রীদের নাকাল অবস্থা তৈরী হয়।
এক নারী যাত্রী ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, এখানে কি দেখার কেউ নেই? এটা ফেরিঘাট সড়ক না করে বালু ব্যবসায়ীদের জন্য ছেড়ে দিলেই তো হয়।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা কোনদিন ঠিকমতো খাওয়া
দাওয়া করতে পারিনা। একটু বাতাস হলেই বালু ঘরে ঢুকে খাবার-দাবার নষ্ট করে ফেলে। ইউপি সদস্য কাসেম খানকে বলেও লাভ নেই, তিনি নিজেই এ ব্যবসা করছেন।
জানতে চাইলে দম্ভিকতার সাথে ইউপি সদস্য কাসেম খান বলেন, আমার নিজস্ব জায়গায় ব্যবসা করছি। রাস্তাজুড়ে গাড়িতে লোড আনলোড করা কতটুকো যুক্তি সঙ্গত জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় বালু গেলে দ্রুত সরিয়ে ফেলি। এছাড়া আরো অনেকে তো ব্যবসা করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে আমি কখনই সমস্যা করিনা।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান মামুন বলেন, রাস্তা আটকে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ব্যবসা করা অপরাধ। এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে সোমবার ইউপি সদস্য কাসেম খানকে ডেকে দ্রুত সমস্ত বালু অপসারনের নির্দেশ দিয়েছি।
শীঘ্র ঘাট উন্নয়ন কাজ শুরু হবে বলে ফেরিঘাট এলাকা থেকে সকল ব্যবসায়ীদের বালু সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন বলেন তিনি।