এবারের রমজান ভালো কাটছেনা আম্ফান কবলিত আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার মানুষদের। কারো ঘরে ঠিক মত খাবার নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা এখন তাদের। ক্ষতিগ্রস্থ কর্মহীন মানুষ গুলো এখন অতিশয় বিপদগ্রস্থ।
২০ মে ২০২০ সালে আশাশুনি উপজেলার ১০নং প্রতাপনগর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যায় সুপার সাইক্লোন আম্ফান। এই আম্ফানের আঘাত ও জলোচ্ছাসের কারণে কুড়িকাহুনিয়া, শ্রীপুর, হরিষখালী, চাকলাসহ বিভিন্ন ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। র্দীঘ ১০ মাস কপোতক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ার ভাটায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় গোটা জনপদ।
বহু ত্যাগ তিতিক্ষার পর সরকারি ও স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙ্গন আটকানো সম্ভব হলেও সীমাহীন অর্থাভাবে দিন কাটছে এ এলাকার মানুষদের। সরকারী ও বেসরকারী ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। বর্তমানে কোন সুধী মহল তাদের দিকে আর পিছু ফিরেও দেখছেননা।
বিশেষ করে প্রতাপনগর, কুড়িকাহুনিয়া, সোনাতনকাঠি, শ্রীপুর, চাকলা, রুইয়ার বিল, সুভদ্রাকাঠি, নাকনা (দক্ষিণ), কল্যাণপুর (দক্ষিণ), মাদার বাড়ীয়া, হিজলা ও কোলা গ্রামের মানুষেরা সীমাহীন ক্ষয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। ঘর-বাড়ী, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-মাদ্রাসা, গাছ-পালা, মৎস্য খামার, সবজীর খামার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি আম্ফানের ভয়ানক ছোবলে তছনছ হয়ে যায়। মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে এবং বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছে।
নদীর পানির লবণাক্ততার কারণে সবুজের সমারোহ খ্যাত প্রতাপনগরের বড় সরদার বাড়ী, মল্লিক বাড়ী, গাজী বাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গার কপাট ভাঙ্গা, মল্লিকা, হিম সাগর, আম রুপালী নাম করা আম কলা, লিচু, লেব,ু সুপারী, মেহগনি, শিশুফুল, বাঁশসহ বিভিন্ন গাছ মরে মরুভূমিতে পরিনত হতে বসেছে। এভাবে গাছ পালা উজাড় হতে থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য হারাতে পারে বলে বিজ্ঞ মহলের ধারনা।
আম্ফান কবলিত ধ্বংসপুরী প্রতাপনগরের মানুষেরা কর্মহীন হয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাছে। প্রতাপনগর গ্রামের মৃত সোবহান গাজীর ছেলে চাষী মোঃ গফুর গাজীর কাছে
এবারের রোজা কেমন কাটছে? জানতে চাইলে তিনি র্দীঘশ্বাস ফেলে বলেন, কেমন আর থাকব! এখনও বেঁচে আছি এটা আমাদের সৌভাগ্য! অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে আমার।
ক্ষেতে ফসল নেই। পুকুরে মাছ নেই। বাগানে ফল নেই। যেটা বিক্রি করে হলেও সংসার চালাব। ঘরে বৃদ্ধা মা, বোন, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। তার মধ্যে সমিতির কিস্তির টাকা নিয়ে খুব বিপদে আছি। টাকা দিতে না পারলে অনেক গালিগালাজ এবং মামলার ভয় দেখান হচ্ছে।
প্রতাপনগর মধ্যপাড়া সবুরের বৌ শাহানারা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে জানালো, ছেলেমেয়ে সংসার নিয়ে এবার খুব কষ্টে আছি। তেল চালের দাম বেশী, এলাকায় কাজ কর্ম নেই। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। ঠিকমত ইফতারও জুটছেনা কপালে। জোয়ারের পানিতে আসা আশ পাশের ডোবা নালা পুকুর থেকে দু’একটা কাকড়া শিকার করে তা বিক্রয় করা অর্থে কোন রকমে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।
শুধু গফুর শাহানারা নয় বিলকিছ, কদবানু, পারুলসহ শত শত পরিবার তাদের ছেলে মেয়ে বাবা মাকে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। অনেকের জায়গা জমি ঘর বাড়ী বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায় বেঁচে থাকার তাগিদে পরিবার পরিজন নিয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা,যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে।
বর্তমানে যারা আছে তাদের কারো পেটে ঠিকমত ভাত নেই, মাথায় তেল নেই, পরনে ছেড়া ময়লা কাপড়। অভাব অনাটনে দিশেহারা হয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা। রোগ শোকে ভাল ঔষধও জুটছেনা তাদের। টাকা পয়সার অভাবে রমজান মাসে ঠিক মত রোজা
পালন করতে পারছে না তারা। আসছে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরতাদের জন্য আনন্দের না হয়ে দুঃখ বয়ে আনতে পারে বলেধারনা করা হচ্ছে।