প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:৪১
নাম জগন্নাথ শীল। বয়স ৬৮ বছর। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের মৃত গোপিনাথ শীলের ছেলে। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই কিন্তু কোনো কাজই থেমে থাকেনি তার।পা দিয়েই কাপড় পড়া, ব্রাশ করা, খাওয়া, লেখাসহ প্রয়োজনীয় সকল কাজ করেন তিনি।
ভিক্ষা ও অন্যের সহযোগিতা না নিয়েই ৬৮ বছর বয়সেও প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাচ্ছেন জগন্নাথ শীল। কিন্তু সম্প্রতি প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীরা আর পড়তে আসে না । ফলে অর্থ কষ্টে অর্ধহারে অনাহারে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথ শীলের একটি ঘর থাকলেও একটু বৃষ্টিতেই চাল দিয়ে ভিতরে পানি পড়ে। প্রতিবন্ধি হওয়ার পরেও সরকারি ১০ টাকা কেজি চালের ভিজিডি কার্ড জোটেনি তার কপালে। তাতে হাল ছাড়েননি জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে।
জগন্নাথ শীল চোখের জল ছেড়ে দিয়ে জানালেন তার অতীত জীবনের কথা। তিনি বলেন, আমি ১৯৫২ সালে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। সংসারে অভাব অনটন থাকলেও কখনও ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেইনি। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো লেখাপড়া করতে চেয়েছিলাম কিন্তু অর্থাভাবে তা আর হয়নি। কোনো রকমে ১৯৬৯ সালে পা দিয়ে লিখেই এসএসসি পাস করি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কোথাও চাকরির সুযোগ মেলেনি। পরে স্থানীয় ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে কোন রকমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি।
আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দশ বছর আগেই বড় ছেলে বিয়ে করে পৃথক হয়েছে। এখন আমার একটাই স্বপ্ন, ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে প্রাইভেট পড়ানোও বন্ধ হয়ে গেছে। এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে চলতে হচ্ছে। কোনো কোনো দিন না খেয়েও থাকতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে সরকারি সহযোগিতা না পেলে না খেয়ে মরতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, জগন্নাথ শীল একজন সহজ-সরল মানুষ। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তার দুটি হাত নেই। অভাবের কারণে কোনো দিন ভিক্ষা করতে দেখিনি। প্রাইভেট পড়িয়েই সংসার চালাতেন। করোনার কারণে সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
এক সময় তিনি সিনেমায় অভিনয় করতেন। তার একান্ত ইচ্ছা তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং তার দুঃখ দুর্দশার কথা জানাবেন। তার জীবনের এই শেষ মূহুর্তে চান সবার একটু সহানুভূতি, আর সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে তার অনেক উপকার হতো। বৃদ্ধ বয়সে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে জীবনে।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ ইশরাত জাহান বলেন, প্রতিবন্ধী জগন্নাথ শীল নিজ প্রচেষ্টায় জীবন নির্বাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে প্রতিবন্ধীভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।