প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২৩:১৯
শিম একটি সুস্বাদু সবজি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মাঠে প্রচুর পরিমাণে শিম চাষ হয়। আগে গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙিনায় কোন গাছে, ঘরের চালে অথবা উচু মাচা বানিয়ে শিমের চাষ করা হতো। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বাণিজ্যিক ভাবে শিমের চাষ হয়ে আসছে। শিমের চাষ করে উপজেলার অনেক চাষী লাভবান হয়েছেন। তেমনই একজন সফল চাষি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে বসবাসকারী মৃত ইমান আলীর ছেলে বাদশা মিয়া।
সরেজমিন তার শিমের ক্ষেতে গিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, পূর্বে তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এতে স্ত্রী, ২ মেয়ে ও মাকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমত হীমসীম খেতে হতো। নিজের কোন জমি না থাকায় দুই বছর আগে তিনি পরিকল্পনা করেন অপরের জমি লিজ নিয়ে সবজি চাষ করবেন। সে মোতাবেক তিনি ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে আড়াই কাঠা জমিতে কাকিলা জাতের শিমের চাষ, দুই কাঠায় লাউয়ের চাষ, দুই কাঠা জমিতে পালংক শাক এবং বাকি জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাসের আবাদ করেন। প্রথম বছর লাভবান হওয়ায় তিনি পুনরায় সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। পরের বছর পুনরায় তিনি শিম, লাউ, পালংক শাক এবং ঘাসের চাষ করেন।
চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, শিম চাষের জন্য আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস উপযুক্ত সময়। প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে নিতে হবে। এরপর ঝুরঝুরে মাটি বানিয়ে মাদা তৈরি করে প্রতি মাদায় ২ থেকে ৩টি করে বীজ পুতে দিতে হবে। এরপর বাঁশ দিয়ে এবং পাটকাঠি বা বাঁশের চটা বেঁধে দিয়ে উচু মাচা তৈরি করে দিতে হবে। পাতা গজিয়ে গাছ লতিয়ে আসলে ডগাগুলো মাচায় তুলে দিতে হবে। বপনের তিন মাস পর থেকে ফল ধরা শুরু হয়।
বাদশা মিয়া জানান, তিনি নিজেই ক্ষেতের সকল কাজ করে থাকেন বলে তার এসকল সবজি চাষ করতে গিয়ে খুব বেশি একটা খরচ করতে হয় নি। তবে পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষায় তিনি মাঝে মধ্যে কীটনাশক স্প্রে, ফলন ভালো পেতে কিছু সার ব্যবহার এবং মাচা তৈরি করতে বাঁশ ক্রয়ে কিছু টাকা খরচ করতে হয়েছে।
পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, অতিরিক্ত পাতা, হলুদ বর্ণ, কুচকানো, পচা, শুকিয়ে যাওয়া পাতা এবং অতিরিক্ত ডগাগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হয়। এতে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। মাঝে মাঝে ডগাগুলো মুড়িয়ে দিতে হয়। শিম ক্ষেতে পচা রোগ, পোকা, ভাইরাস ও ফুল ঝরে পড়া রোগ আক্রমণ করে। মুলতঃ জাবপোকার আক্রমণ হয় বেশি। জাব পোকা গাছের পাতার নীচের অংশে হয়, পাতা চুষে নষ্ট করে। জাব পোকার ক্ষতিকর লালা আস্তে আস্তে পাতার ভিতরে ঢুকে পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। গরমের মাত্রা বেশি হলে পচা রোগ প্রতিরোধে ও পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষায় প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন পর পর স্প্রে করা লাগে। ঔষধ ছিটানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের সব স্থানে ঔষধ লাগে। এতে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ হবে। স্প্রে করার ৫ থেকে ৭ দিন পর ফসল বিক্রি করা যায়।
বাদশা বলেন, চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি শিম ৩২ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দরে তিনি বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৭ হাজার টাকার মতো শিম বিক্রি করতে পেরেছেন। আগামী আরো তিন মাস বিক্রি করতে পারবেন। শিমের পাশাপাশি লাউ, পালংকশাক এবং ঘাস বিক্রি করেও তিনি লাভবান হয়েছেন। চলতি মৌসুমে শিমের দাম ভালো পাওয়ায় আগামী বছর তিনি শিমের চাষ আরো বাড়াবেন বলে আশা করছেন।